‘‘সে ধনী আছিল শ্যামেব হিয়ার হার—
বঁধূর হিয়ার হার আছ ধূলায় পড়ি গো—
মরি মরি হরি-বিরহে আজ কি দশা তাঁহার’’
এখানে কৃষ্ণ তাঁহাকে নিজের গলার হারের ন্যায় মূল্যবান মনে করিতেন, এইজন্যই চন্দ্রাবলীর কাছে রাধার রূপের মূল্য ও তাঁহার জন্য এত আক্ষেপ।
‘‘হায় গো অতুল রাতুল কিবা চরণ দুখানি,
আলতা পরাত বঁধু, কতই বাখানি।
এ কোমল চরণে যখন চলিত হাটিয়া গো—
বঁধুর অনুরাগে গো,
হেন বাঞ্ছা হ’ত যে পাতিরে দেই হিয়ে।’’
আল্তা পরাইবার সময় কৃষ্ণ সেই পদযুগ্মের রূপের কতই না ব্যাখ্যা করিতেন, এইজন্য সেই “অতুল রাতুল চরণ দুখানি” চন্দ্রার কাছে এত সুন্দর এবং যখন এই দুইটি চরণ-কমলে পথে হাটিয়া শ্যাম-দর্শনের জন্য রাধা যাইতেন, তখন চন্দ্রা সেই পথে বুক পাতিয়া রাখিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিতেন—যেন রাধার পায়ে পথের কাঁকর বা কাঁটা না বাজে।
চন্দ্রাবলী এই যে রাধার নিরুপম রূপ আবিষ্কার করিয়াছিলেন, তাহা বাহিরের রূপ নহে, সে রূপ কৃষ্ণ-প্রেমের মধ্যে। এই রূপের গৌরব করিয়াই রাধা বলিয়াছিলেন— “আমি রূপসী তোমার রূপে” এবং চন্দ্রা বলিয়াছিলেন— “মরি, যে রাধার রূপ বাঞ্ছে শ্রীপাব্বর্তী, যাঁহার সৌভাগ্যশ্রী বাঞ্ছে অরুদ্ধতী”! চন্দ্রা রাধার রূপ দেখিতেছিলেন না, তিনি কৃষ্ণের প্রেমই দেখিতেছিলেন।
গৌর-চন্দ্রিকা
এই পদাবলী পড়িয়া পাছে কেহ ইহাতে সাধারণ নায়ক-নায়িকার ভাব আরোপ করিয়া বৈষ্ণবের স্বর্গকে বাস্তবের মাটীতে পরিণত করেন,