পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৪
পদাবলী-মাধুর্য্য

প্রাকৃতিক রাজ্যে বাঁশের বাঁশীর যে মর্ম্মান্তিক সুর উঠিত, তাহা শুনিয়া কুল-বধু আঁচলে চোখ মুছিত, সন্তান-হারা জননীর মর্ম্মে মর্ম্মে বিলাপের উচ্ছ্বাস বহিত, সাধকের মন দেবতার পায়ের নূপুর-ধ্বনি শুনিতে পাইত। সেই সুরের মর্ম্মান্তিক করুণা ও বিলাপ শুনিয়া মায়ের কোলে থাকিয়া শিশু রাত্রে ঘুমাইতে চাহিত না। এখনকার হারমোনিয়াম, ক্লারিওনেট্‌ এবং পিয়ানোর সুর খাঁটি বাঙ্গালীর কাণে তেমন লাগিবে না। পথে যাইতে যাইতে বাঁশীর সুর শুনিয়া পথিক থমকিয়া দাঁড়াইত—পথ ভুলিয়া যাইত, কলসীর জল ফেলিয়া কুলবধূ আবার জল আনিতে যাইত, সূর্য্য পশ্চিম গগনে ডুবিয়াও পুনরায় উঁকি মারিয়া মাঠের দিকে তাকাইতেন। বাঙ্গালার খাঁটি কবিরা বহুস্থানে এই বাঁশের বাঁশীর উল্লেখ করিয়াছেন। অর্ফিয়সের গানে পাহাড় টলিত, নদীর তুফান থামিয়া যাইত,—বাঙ্গলার বাঁশী ও সারেঙ্গের সম্বন্ধেও সেইরূপ অত্যুক্তি আছে। “নুরনেহার ও কবর” নামক পল্লী-গীতিকায় সারেঙ্গের সুরের যে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা আছে, তাহা ঠিক বাঙ্গলা দেশেরই সুর-ভাণ্ডারের—এই অত্যুক্তির মধ্যে প্রাণে সাড়া দেওয়ার অনেক কথা আছে।

 বাঁশের বাঁশীর সুর শুনিয়া ‘মহিষাল বঁধু’র নায়িকা রাখাল বালকের রূপ নূতন করিয়া দেখিতে শিখিয়াছিল:—

“আর দিন বাজে বাঁশী না লাগে এমন।
আজিকার বাঁশীতে কেন কাড়ি লয় মন।
লাজেতে হইল কন্যার রক্তজবা মুখ।
প্রথম যৌবন কন্যার এই প্রথম সুখ।”

 ‘আঁধা বঁধু’তে সেই সুরের মহিমা নন্দনকাননজাত ফুল-ফলের শ্রী লইয়া অপূর্ব্ব হইয়া আত্মপ্রকাশ করিয়াছেঃ—

“বনের বাঁশী নয়ত ইহা মনের বাঁশী হয়।
ছোটকালের যত কথা জাগায়ে তোলয়॥