পদাবলী-মাধুর্য্য
২৩
কৃষ্ণপ্রেমের এই “অনভিব্যক্ত রত্নোৎপত্তিরিবার্ণবঃ” ছবির তুলনা নাই। পরবর্ত্তী কবিরা এই কথার ব্যাখ্যা করিয়া বলিয়াছেন:—
“ঢেউ দিও না জলে বলে কিশোরী।
দরশনে দাগা দিলে হবে পাতকী॥”
চণ্ডীদাস কথা বলিতে বলিতে থমকিয়া যায়; বলিবার থাকে অনেক, কিন্তু বলেন অল্প। পাঠকের মনে ইঙ্গিতমাত্রে একটা তোলপাড় জাগাইয়া, তিনি অল্প কথায় শেষ করেন। তিনি কৃষ্ণ-রূপ মনে মনে ধ্যান করিয়া আবিষ্ট হইয়া পড়েন, তখন অন্য কোন ব্যাখ্যা না দিয়া আপন মনে নিজের শেষ সঙ্কল্পের কথা বলিয়া ফেলেন—
“কুলের ধরম নারিনু রাখিতে, কহিনু তোমার আগে।
চণ্ডীদাস কহে শ্যাম-সুনাগর সদাই হিয়ায় জাগে॥”
রাধিকা বলেন নাই, কিন্তু চণ্ডীদাস তাহা বলিয়া দিয়াছেন।
সমস্ত পদটি এই:—
“কাহারে কহিব মনেরই মরম, কেবা যাবে পরতীত।
(আমার) হিয়ার মাঝারে মরম-বেদন সদাই শিহরে চিত॥
গুরুজন আগে দাঁড়াইতে নারি, সদা ছল-ছল আঁখি।
পুলকে আকুল, দিক্ নেহারিতে সব শ্যামময় দেখি॥
সখীর সহিতে জলেরে যাইতে সে কথা কহিবার নয়।
যমুনার জল করে ঝল্মল্ তাহে কি পরাণ রয়॥
(আমি) কুলের ধরম নারিনু রাখিতে কহিলাম তোমার আগে।
কহে চণ্ডীদাস শ্যাম সুনাগর সদাই হিয়ায় জাগে॥”
এই গীতটি বাহ্য দৃশ্যে কতকটা অসম্পূর্ণ মনে হইবে, কিন্তু ইহা নিগূঢ় অর্থব্যঞ্জক।
রাধিকা বলিতেছেন, তাঁহার মনের অবস্থা কেহ বিশ্বাস করিবে না; কিন্তু কি বিশ্বাস করিবে না, তাহা বলেন নাই। গুরুজনের কাছে