যশোদা তাঁহার সঙ্গে ঘাঁটিয়া উঠিতে পারিবেন না। বারুণী-পানে মত্ত বলাই আসিতেছেন, কবি বলিতেছেন, বলাই-এর বারুণী বিশুদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম, তিনি একটু তোত্লা, (নিত্যানন্দ একটু তোত্লা ছিলেন, কবিরা বলরামে তাহাই আরোপ করিয়াছেন), টলিতে টলিতে বলাই আসিতেছেন, শিঙায় কানাই-এর নাম একটু ঠেকিয়া ঠেকিয়া আসিতেছে, ‘কা-ক্কা কানাই’ বলিতে বলিতে আসিতেছেন, তাঁহার মুখপদ্ম কৃষ্ণ-প্রেমাশ্রুতে ভাসিয়া যাইতেছে। মা রোহিণী যেখানে যেটি সাজে, তাই দিয়া বলাইকে সাজাইয়া দিয়াছেন।
“গলে বনমালা হাতে তাড়-বালা, শ্রবণে কুণ্ডল সাজে।
ধব-ধব-ধব ধবলী বলিয়া ঘন ঘন শিঙা বাজে।
(কিবা) নব নটবর নীলাম্বর লস্ফে ঝম্পে আওয়ে।
মদে মাতল কুঞ্জর গতি উলটি পালটি চাওয়ে।”
এই সুদর্শন শুভ্রকান্তি বিরাট্ দেহ বলদেবের পদভরে ধরিত্রী কম্পিত হইতেছে। মাতাল বলাই বলিতেছেন, “খির রহ ধরণী”—পৃথিবীকে এই ভাবে আশ্বাস দিয়া আসিতে আসিতে বৃন্দাবনের প্রাতঃ-সূর্য্যকরে প্রতিবিম্বিত স্বদেহের বিরাট্ ছায়া দেখিয়া তিনি মনে করিলেন, সত্যই বৃন্দাবন দখল করিতে কোন প্রবল আগন্তুক অভিযান করিয়া আসিয়াছে, তখন মত্ত বলাই ছায়াকে জিজ্ঞাসা করিতেছে “তুই কে, পরিচয় দে? আমি কা-ক্কা কানাই এর দাদা, জানিস্ আমি কত বড়!” বলাই বলিল না, যে তাঁহার হলকর্ষনে জগৎ উল্টিয়া যাইতে পারে, সে বড় বড় অসুরকে অবলীলাক্রমে বধ করিয়াছে। বৃন্দাবনে সমস্ত রাজসিক দর্প ভাসিয়া গিয়াছে, কৃষ্ণপ্রেম ছাড়া সেখানে গৌরব করিবার কিছু নাই। তাই সে পরম দর্পে নিজ ছায়াকে বলিতেছে, “জানিস্ আমি ভাই কানাই-এর দাদা, এই পুরুষ বাক্যের উচ্চারণকালে তাঁহার ভ্রমরপুঞ্জের ন্যায় কজ্জল-