পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৪৩

চাতক জলদে বলি সে নহে তুলনা,
সময় না হৈলে না দেয় এক কণা।
কি ছার চকোর চাঁদ দুহ সম নহে,
ত্রিভুবনে হেন নাই, চণ্ডীদাস কহে। (চ)

 একজন মরিয়া যায়, অপর সুখে থাকে, এ আবার কেমন প্রেম? একজন আসিলে মিলন হইবে, সে না আসিলে অপরে তাহার স্বস্থান ছাড়িয়া একটুও নড়িবে না, সেই প্রসাদাকাঙ্ক্ষীর আবার প্রেমের বড়াই কোথায়? একজন বিন্দু-কৃপার জন্য প্রতীক্ষা করিয়া থাকিবেন, অপরে ঠিক ঘড়ি ধরিয়া তাহার সুবিধানুসারে যৎকিঞ্চিৎ দিবেন, তখন না হইলে দিবেন না, এতো রাজবাড়ীর অতিথিশালার বরাদ্দ-মাফিক ভিক্ষাদান, এখানে প্রেম কোথায়? আর একজন অত্যূর্দ্ধে বসিয়া স্বীয় অপূর্ব্ব বৈভব লইয়া দর্প করিবে, অপর ব্যক্তি ক্ষুদ্রতম ভিক্ষুর ন্যায় তাহার কণা-প্রসাদের আকাঙ্ক্ষা করিয়া থাকিবে, দুই জনের পদ-পার্থক্য এতটা হইলে, সম-জ্ঞান না হইলে প্রেম কোথায় পাওয়া যাইবে?

 বৈষ্ণব পদে ভক্ত ও দেবতার মধ্যে এক তিল ব্যবচ্ছেদ-রেখা নাই। জগতে বাঙালীর মত আর ‍কোন জাতি ভগবানকে এত আপনার করিয়া দেখিতে সাহসী হন নাই। কৃষ্ণ কখনও যশোদার হাতে, কখনও রাধিকার পদতলে, কখনও সখাদের মার-ধরের মধ্যে কত লাঞ্ছনা পাইতেছেন—সেই অবাধ, সম্পূর্ণরূপ একাত্মবোধ দ্বারা পরিশোধিত ক্ষেত্রে প্রেমের পূর্ণ বিকাশ হইয়াছে। যাহাকে সর্ব্বস্ব দিয়াও কিছু চায় না, তাহার কাছে দর্পহারীর দর্প থাকিবে কিরূপে? তিনি তাহাকে কি দিবেন?—সে শুধু তাঁহাকেই চায়। কি ভয় দেখাইবেন? সে শুধু তাঁহার বিরহকে ভয় করে—এরূপ লোকের কাছে ভগবান পরাজিত।