মূল্য যে জগতের কোন মূল্যবান্ বস্তু অপেক্ষা অল্প তাহা কখনই স্বীকার করিব না, আমাদের দৃষ্টিশক্তির প্রসার অল্প, সেই জন্য বিরাট্ জ্যোতিষ্ক-গুলিকে আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দুর মত দেখিয়া থাকি।
দুই এক মাস পরে পরেই গৌর দাস আমার বাড়ীতে কীর্ত্তন গাহিত। তাহার দল সহ সে আমার আমন্ত্রণে বাড়ীতে আসিত। এই উপলক্ষে প্রতিবারই আমার ৪০।৫০৲ টাকা খরচ হইত। এ টাকা ব্যয় আমার সার্থক ছিল। লোকে দার্জ্জিলিং, শিমলা শৈলে বা ওয়াল্টারে ঘুরিয়া স্বাস্থ্য ফিরিয়া পায়। গৌর দাসের কীর্ত্তন শুনিয়া আমার মনে হইত, আমার মনোতরুর শুক্না পাতাগুলি ঝরিয়া পড়িতেছে এবং সবুজ পল্পব দেখা দিয়াছে এবং স্বর্গীয় কুসুমের কুঁড়ি ফুটিতেছে—তাহার সমাগমে আমার মনের মধ্যে এই ঋতু-পরিবর্ত্তন লক্ষ্য করিতাম। সে আমাকে মর্ত্ত্যলোক হইতে স্বর্গলোকে লইয়া যাইত। আমার স্ত্রী-পুত্র-পরিবার, কালিদাসের কবিতা আমাকে যে সুখ দিয়াছে, ততোধিক আনন্দ দিয়াছে গৌরদাসের কীর্ত্তন।
মনে আছে, একদিন গৌরদাস রূপাভিসারের একটা গান গাহিতেছিল, সেই একটি গান গাহিতে তাহার পুরা তিনটি ঘণ্টা লাগিয়াছিল, কিন্তু এই সময়টা যে কি ভাবে গিয়াছিল, তাহা আমি বুঝিতে পারি নাই। রাধা সেই গানটিতে শ্রীকৃষ্ণের চোখের ভঙ্গীর কথা বলিতেছিলেন, তাঁহার সেই নয়নের নৃত্য রাধার সর্ব্বাঙ্গ নাচাইতেছিল—সেই নৃত্যের আসর রাধার দেহ—কত ছন্দে, কত অমৃতাস্বাদী আখরে, সুরের সমন্ত ভাণ্ডার খালি করিয়া সেই চক্ষের নৃত্য চলিতেছিল! সে যে কি আনন্দে কীর্ত্তনটি শুনিয়াছিলাম, তাহা আর কি বলিব, বোধহয় বজ্রপাত হইলে তখন সেই শব্দ আমার কাণে পৌছিত না। যে কণ্ঠ ভগবান স্বয়ং নারদ বা তুম্বুরুর গীতি-যন্ত্রের