এক কোণে অপরাধীর মত দাঁদাইয়াছেন, সেই প্রেমের কল্পতরু আমাকে বুঝাইয়াছিলেন, তাঁহার সকল ফুল-ফল আমারই প্রেমের নৈবেদ্য, আমি ছাড়া তাঁহার আর কেহ নাই—আমারও যেমন তাঁহাকে ছাড়া আর কেহ নাই! কিন্তু তিনি যদি তাহা না হন? তিনি যে জগদীশ্বর—সমস্ত জগতের, আমার মত তাঁহার শত শত আছে,
‘‘আমার মতন তোমার অনেক রমণী
তোমার মত আমার তুমি গুণমণি,
যেমন দিনমণির অনেক কমলিনী,
(কিন্তু) কমলিনীগণের ঐ একই দিনমণি।’’
তবে কি আমি শত শত কোটীর একজন?
এই অবস্থায় রাধা অতি ব্যাথা সহকারে বলিতেছেন
‘‘রাধানাথ বলিতে ভয় হয় চিতে, তাই গোপীনাথ বলিয়া ডাকি।’’
আমায় যদি বহুর মধ্যে একজন হইয়া তাহার প্রেমের ভিখারী হইতে হয়, তবে তো আমি প্রাণে মরিব,—
‘‘রাধা ভাগের প্রেম নেবে না।’’
কাহাকে সর্ব্বস্ব দিলাম, সে কি সত্যই বিরাট্? হিমাদ্রির পাদমূলে মাথা ঠেকাইয়া—আমি নগণ্য—নিলাম হইয়া গেলাম, এত ক্ষুদ্রকে সেই বিরাট্ পুরুষ কি মনে রাখিবেন? “দুঁহু সম” না হইলে প্রেম হইবে কিরূপে? ক্ষুদ্রের ভালবাসার আর গৌরব কি? মহানের কাছে অণু হইয়া কৃপাকণার জন্য ভিক্ষুক সাজিব? বিদ্যাপতির রাধার ন্যায় চণ্ডীদাসের রাধাও বলিতেছেন:—
আমি তোমার জন্য,
“ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর,
পর কৈনু আপন আপন কৈনু পর।
রাতি কৈলাম দিবস দিবস কৈনু রাতি।
বুঝিতে নারিনু বঁধু তোমার পীরিতি।’’