পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬২
পদাবলী-মাধুর্য্য

ভাঙ্গিয়া দিয়াছে। কাশীর বিশ্বনাথ আজ অপহৃত। এখন প্রত্যুষে উঠিয়া বন্দীরা সুললিত স্বরে কাহাকে জাগাইবে, কাহার জন্য প্রভাতী গান গাহিবে? ছত্রধারিণী, তাম্বুল বাহিকা, ব্যজনকারিণীরা কাহার সেবায় নিযুক্ত হইবে? দেবভোগ রাঁধিবার জন্য সূপকারেরা আর কেন আয়োজন করিবে? মালীরা শত শত মালা হাতে লইয়া স্তব্ধ হইয়া আছে। মন্দির আর নাই—যজ্ঞকুণ্ড নাই, হোমাগ্নি নিবিয়া গিয়াছে।

 তবে কি মাথুরে গোপীপ্রেমের পরিসমাপ্তি, এখন কি শুধু আক্ষেপোক্তি ও অশ্রুতেই গোপীপ্রেম পর্য্যবসিত হইল? ক্রূরতার অবতার অক্রূর আসিয়া কি এই ভাবেই বৃন্দাবনের প্রেমের হাট ভাঙ্গিয়া দিয়া গেলেন? শাস্ত্রে অবশ্যই এ কথা লিখিত আছে, মথুরা হইতে কৃষ্ণ আর ফিরিয়া আসেন নাই। কিন্তু বাঙ্গালীরা কৃষ্ণের মথুরা যাওয়া অস্বীকার করিয়াছেন। তাঁহাদের মতে কৃষ্ণ “বৃন্দাবন পরিত্যজ্য পাদমেকং ন গচ্ছতি”। ‍“মাথুর” তাঁহাদের মতে বৃন্দাবনের নিত্যলীলায় প্রোষিত-ভর্ত্তৃকা রসাস্বাদের জন্য পরিকল্পিত। কৃষ্ণকমল লিখিয়াছেন,—

‘‘গোস্বামী-সিদ্ধান্ত মতে স্বয়ং ভগবান,
বৃন্দাবন ছাড়ি এক পদ নাহি যান।
তবে যে গোপিকার হয় এতই বিষাদ।
তার হেতু প্রোষিতভর্ত্তৃকা রসাস্বাদ।’’

 মাথুরের পর শাস্ত্রানুসারে বৈষ্ণবদের সমস্ত কথা শেষ। প্রেমলীলার তাঁহাদের আর কিছু বলিবার থাকে নাই। যে ছেলেটি একটা বাঁশের আগা কাটিয়া বাঁশী বানাইত, নেংটির মত ধটি পরিত, বৃন্দাবনের মাঠে কুড়াইয়া পাওয়া ময়ুরের পালক মাথায় দিয়া গোয়াল-বালকদের মধ্যে রাজা সাজিত, বনে বনে ঘুরিয়া বনফুল ও গুঞ্জা ফলের মালা