পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৬৭

ইহার প্রকাশ। এজন্য একদিকে সাধক, অপর দিকে সাধারণ পাঠক তুল্যরূপে ইহা উপভোগ করিয়া থাকেন। মনোহর-সাই রাগিণীতে এই সকল গীতি যে কিরূপ হৃদয়গ্রাহী হয়, তাহার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে।

 বৈষ্ণব কবিরা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের লোক, তথাপি জনসাধারণই তাঁহাদের লক্ষ্য। খুব উচ্চ স্থান হইতে যেরূপ নিম্ন স্থান দেখা যায়, তাঁহারা সেইরূপ পরমার্থ-প্রেমের উর্দ্ধলোক হইতে জগতের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াছেন। এই উদার দৃষ্টির গুণে অজ্ঞ জনসাধারণ তাঁহাদের কাব্যরসের উপভোগ হইতে বঞ্চিত হয় নাই। অথচ ইহা খুব আশ্চর্য্যের বিষয় যে, যুগযুগান্তর ব্যাপক দর্শন ও অপরাপর শাস্ত্র-চর্চ্চার গুণেই হউক, কিংবা চৈতন্য প্রভুর অপূর্ব্ব প্রেমোম্মাদনার প্রেরণার দরুণই হউক, অথবা ফকির, দরবেশ, বাউল, সহজিয়া গুরু, কথকঠাকুর প্রভৃতি লোক-শিক্ষকদের সহিত অবিরত সংস্পর্শের ফলেই হউক, বঙ্গের সমস্ত বায়ুস্তরে একটা উচ্চ চিন্তার প্রবাহ বিদ্যমান,—বাঙালার মূর্খ চাষার হৃদয়েও ফল্গু নদীর মত একটা প্রগাঢ় মর্ম্মানুভূতি ও রসধারা খেলা করে, তাহা অপর দেশের শিক্ষিতদের মধ্যেও দুর্ল্লভ। এখানে এই নিম্নশ্রেণীর লোকদিগকে আমরা এক হিসাবে শিক্ষিতই বলিব। তাহারা অনেক সময় নিরক্ষর হইলেও, অশিক্ষিত বলিয়া উপেক্ষিত হইবার যোগ্য নহে। যুগ-যুগের শিক্ষা তাহাদিগকে শিখাইয়াছে—কানুপাদ প্রভৃতি সহজিয়ারা তাহাদিগকে গুহ্য তত্ত্ব শিখাইয়াছেন, বঙ্গের নৈয়ায়িকেরা তাহাদিগকে শিখাইয়েছেন; এমন কি হটযোগী তান্ত্রিকেরা তাহাদিগকে যতটা শিখাইয়াছে, এখনকার উচ্চ-শিক্ষিত সম্প্রদায়ের অনেকে তাহা শিখেন নাই।

 এই সুচিরাগত সংষ্কার ও ভাবপ্রবণতার গুণে বাঙালার জনসাধারণ কীর্ত্তনগুলিকে সমন্ত হৃদয় দিয়া গ্রহণ করিয়াছে। ইহা এক অভাবনীয়