পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৬৮
পদাবলী-মাধুর্য্য

কাণ্ড। তাহারা গানগুলির মধ্যে সময়ে সময়ে এরূপ সকল ‘আখর’ দিয়া থাকে, যাহাতে সেগুলি অপূর্ব্বভাবে রূপায়িত হইয়া মর্ম্মান্তিক কারুণ্য-পূর্ণ হইয়া ‍উঠে। যেখানে রাধিকা বলিতেছেন (পূর্ব্বোদ্ধৃত গানটি দেখুন) “রাখবি তনু এই ব্রজ মাঝে”, মূর্খ গায়েণ আখর দিয়া গাইল “আমার ব্রজ ছাড়া করিস্‌ নারে—আমি ব্রজ বড় ভালবাসি, ব্রজে পদরজঃ আছে”—এইরূপ “নীরে নাহি ডারবি”“অনলে নাহি দাহবি”, এই দুই পদের পরে আখর দিয়া গায়, “আমার আর জলে ভাসাস্‌ না, আমি সদা নয়ন-জলে ভাসি সখি,—আমায় আর পোড়াস্ নাগো সই—আমি বিরহ-আগুনে পোড়া” ইত্যাদি।

 যেখানে তমাল-ডালে বাঁধিয়া রাখার কথা আছে, সেখানে গায়েন আখর দিয়া দস্তুর-মত একটি পদ রচনা করিয়া উহার ব্যাখ্যা করিয়াছে—

‘‘যদি আসিয়া সই, বঁধু শুধায় রাই কই,
তখন তোরা বলিস্ তারে—তোমার বিরহে রাই মরেছে,—
আমরা ফেলি নাই, ওই তমাল-ডালে বাঁধা আছে—
সে যে তোমারে দেখাবার লাগি।
যদি হা-রাধে, হা-রাধে করি’, বধুঁ উঠে ফুকরি’,
তবে আমার সেই মৃত তনু বঁধুর চরণেতে দিও ডালি।’’

রায়-শেখরের পদটির এই ভাষ্য মূর্খ ‍গায়েন করিয়াছে। তাহাকে অবশ্য কবির কাব্যের উৎকৃষ্ট বোদ্ধা বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। অবশ্য এই পদ ও আখর কীর্ত্তনিয়ার মুখে না শুনিলে, ইহার সৌন্দর্য্য সমগ্রভাবে ধরা পড়িবে না।

 কৃষ্ণ মথুরায় যাইয়া সব ভুলিয়াছেন। কিন্তু গোপীকে যত বড় ঐশ্বর্য্যের কথাই শুনাও না কেন, সে ভুলিবার পাত্র নহে। সে শুধু প্রাণকেই বড় বলিয়া জানে, ধন-মান তাহার কাছে নগণ্য। ঐশ্বর্য্যের সঙ্গে মাধুর্য্যের প্রভেদ দেখাইবার জন্যই বৈষ্ণব কবির মাথুরের