পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৭৫

প্রতিদিন কত কি জিজ্ঞাসা করিতেন। কিন্তু আজ “পিয়া আসিবার নাম শুনাইতে, উড়িয়া বসিল তায়” কাক শুভস্বর করিয়া আমার নিকটে উড়িয়া আসিল।

 আজ “মুখের তাম্বুল খসিয়া পড়িছে, দেবের মাথার ফুল”—অহেতুক আনন্দে কার সোহাগে মুখের চর্ব্বিত তাম্বুল খসিয়া পড়িয়াছে? শিবমন্দিরে প্রণাম করিতে যাইয়া, হঠাৎ শিবের মাথার আশীর্ব্বাদী ফুল আমার হাতে আসিয়া পড়িল।

 এই সুলক্ষণগুলি বহুদিনের অনাস্বাদিত-সুখের, অপূর্ব্ব-প্রাপ্তির আনন্দের নিশ্চিত সূচক। রাধার অন্তরের দেবতা তাঁহাকে এইভাবে সে সুখ সংবাদ দিলেন, কৃষ্ণ সত্যই আসিবেন।

 কত বার তিনি তমাল-তরুকে কৃষ্ণ-ভ্রমে শিহরিত রোমাঞ্চিত দেহে দাঁড়াইয়া সখীকে বলিয়াছিলেন,

‘‘আমার কেন অঙ্গ হৈল ভারি।
আমি যে আর চল্‌তে নারি।’’

 রাধাকে আশ্বাস দিতে যাইয়া সখীরা বলিয়াছেন, কৃষ্ণ সত্যই আসিয়াছেন। সে ভ্রম ঘুচিলে, রাধা “পেয়ে নিধি হারাইলাম” বলিয়া কাঁদিয়াছেন এবং বলিয়াছেন, “তোরা তো ঠিকই বলেছিলি কৃষ্ণ এসেছিলেন, কিন্তু “আমার ভাগ্যে তমাল হ’ল।” কত দিন মেঘকে কৃষ্ণ ভ্রম করিয়া অহেতুক পুলকে তিনি হৃষ্টা হইয়াছেন, কত প্রলাপোক্তি করিয়াছেন, আজ কৃষ্ণকে দেখিয়াও বিশ্বাস করিতে পারিতেছেন না। কি জানি, আবার যদি তমাল বা মেঘ হইয়া যান!

 উৎকট কুণ্ঠার সহিত দ্বিধাযুক্ত ভাবে রাধা সখীকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, কত বার তো তিনি ছলনা করিয়া নব মেঘ হইয়া গিয়াছেন—

কুঞ্জের দ্বারে ঐ কে দাঁড়ায়ে!
দেখ দেখ গো ও বিশাখে,