পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮০
পদাবলী-মাধুর্য্য

তুমি আমার হইয়া আমার কাছে থে’ক। শুধু জীবনে-মরণে নহে, “জনমে-জনমে প্রাণনাথ হৈও তুমি।” তোমার সঙ্গে তো আমার এক জন্মের সম্বন্ধ নহে—এ সম্বন্ধ জন্ম জন্মের—কোন জন্মে যেন তোমার কাছ হইতে সংসার আমাকে ভুলাইয়া না লইয়া যায়। এই মরীচিকা-সঙ্কুল, প্রতারণার রাজ্যে অনেকেই আমাকে পথ ভুলাইতে আসিবে—রূপ, যশঃ, মান, ঐশ্বর্য্য তুমি ঘাটে ঘাটে রাখিয়াছ— আমার মনের বল ও অনুরাগ পরীক্ষা করিতে। কোন অশুভ মুহূর্ত্তে যেন তাহারা তোমাকে আড়াল করিয়া না দাঁড়ায়। রাধিকা বলিতেছেন—“হে জীবনধন, তুমি জীবনে আমার হইও, মরণে আমার হইও—জন্মে জন্মে আমার হইও। তোমার চরণ-পদ্মের সঙ্গে আমার প্রাণের একটা ফাঁসি লাগিয়া গিয়াছে,—যদি মুহূর্ত্তের জন্য চরণ সরাইয়া লইয়া যাও, তবে সেই প্রেমের ফাঁসীতে আমার প্রাণ যাইবে। তাই আমার সমস্ত তোমাকে নিবেদন করিয়া, এমন হইয়া আমি তোমার চরণের দাসী হইয়াছি। আমার একুলে—স্বামীর কুলে, ওকুলে পিতৃকুলে বৃষভানুর পুরীতে, দুকুলে—বৃন্দাবনে অবস্থিত এই দুকুলে আমার আর কে আছে? বিপথে গেলে কে আমায় উদ্ধার করিবে? বরং মায়ায় আবদ্ধ করিয়া তাহারা তোমার কাছ হইতে আমাকে দূরে লইয়া যায়। এই বিভ্রান্ত মায়াপুরী হইতে আমাকে কে রক্ষা করিবে?

  “বঁধু! কি আর বলিব আমি
  আমার জীবনে-মরণে মরণে-জীবনে প্রাণনাথ হৈও তুমি।
তোমার চরণে আমার পরাণে বাধিল প্রেমের ফাঁসি,
সব সমপিয়া, একমন হইয়া নিশ্চয় হইলাম দাসী।
আমার একুলে, ওকুলে, দু’কুলে গোকুলে, আর মোর কেবা আছে।
রাধা বলি কেহ শুধাইতে নাই, জানাব কাহার কাছে।”

 এই ভাবে রাধা একেবারে নিঃস্ব ও নিরাশ্রয় হইয়া তাঁহার আশ্রয় লইয়াছেন। যে আশ্রয়ের পূর্ব্বসংস্কার তাঁহার ছিল, তাঁহার স্বামিকুল,