পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮২
পদাবলী-মাধুর্য্য

বাহিরের ছবি ছায়াবাজির মত, তাহারা খাঁটী জিনিস দেখায় না। এইজন্য তরু যেখানে জন্মিয়াছে, সেইখানেই আসন পাতিয়া বসিয়া তপস্যা করিতেছে। সে বুঝিয়াছে, বাড়ী-ঘর নিরাপদ্‌ নহে, উহা মাথায় ভাঙ্গিয়া পড়িতে পারে, বজ্রপাতে ছাদ ভাঙ্গিয়া যায়। গৃহের মধ্যেও সর্পে দংশন করে, আবৃত স্থানে থাকিলেও পীড়া হয়—ইহা সংস্কার ও অভ্যাস মাত্র, বরং পশু-পক্ষীর জীবনই স্বাভাবিক জীবন। ভগবানের চরণপদ্ম ছাড়া আর কোন আশ্রয়ই আশ্রয় নহে। এজন্য তরু আশ্রয়ের জন্য চতুর্দ্দিকে ধাবমান হয় না, সে শুধু লতার মত তাঁহাকেই জড়াইয়া থাকিতে চায়; ভগবানের চরণপদ্মই তাহার সর্ব্ব আশ্রয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। আকাশ যখন ঘনঘটাচ্ছন্ন হয়, বিদ্যুৎস্ফূরণে দিক্ প্রকম্পিত হয়, ভীষণ অজগর যখন ফোঁস-ফোঁস করিতে করিতে নেত্রে অগ্নিবর্ষণ করিয়া ছুটিয়া আসে, তখন হয়ত সে তাঁহার কৃপালাভ করিতে পারিলে নিরাপদে থাকে, ঘন-বর্ষণে তাহার পত্র-পল্লব আরও সবুজ হয়, তাহার শিব-তুল্য দেহ জড়াইয়া ধরিয়া সর্প নিজের বিষের জ্বালা তুলিয়া যায়—কারণ সে অমৃতময়কে আশ্রয় করিয়া অমৃতময় হইয়া উঠিয়াছে।

 বৈষ্ণবের জ্ঞানকর্ম্ম ছাড়িয়া এজন্যই তাঁহাকে আশ্রয় করাই প্রেমিকের শেষ লক্ষ্য বলিয়া নির্দ্দিষ্ট করিয়াছেন এবং গীতা বলিয়াছেন “সর্ব্বসর্ম্মান্‌ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।”

 চণ্ডীদাসের রাধা এইভাবে সমস্ত আশ্রয় ত্যাগ করিয়াছেন। একুল-ওকুল, এই দুই কুল ত্যাগ করিয়া তিনি একেবারে কৃষ্ণপ্রেমের মাঝ-দরিয়ায় ঝাঁপ দিয়াছেন। তিনি ধনিশ্রেষ্ঠ আয়াণ ঘোষের অট্টালিকা ও বৃষভানুর প্রাসাদ ছাড়িয়া দিয়া, বসনভূষণ পরিত্যাগপূর্ব্বক একেবারে রিক্তা হইয়া পথে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন—তখন কানু-অনুরাগই তাঁহার একমাত্র রাজাবাস, কানুর কলঙ্কই এই দিগম্বরী সন্ন্যাসিনীর অঙ্গভষ্ম,