পড়িল। হাসপাতালে থাকিতে দিল না, ফিরিবার নৌকা পাওয়া গেল না, কোথায় যায়? শেষে এক মােক্তারবাবু দয়া করিয়া তাদের আশ্রয় দিলেন।—কী নাম য্যান মাঝি মুক্তারবাবুর? মুখ ফিরাইয়া কপিলা জিজ্ঞাসা করিল কুবেরকে।
কুবের থতমতাে খাইয়া বলিল, কেডা জানে?
জিগাও নাই?
কুবের মাথা নাড়িল।
দুদিনের মধ্যে আর গােপিকে দেখিতে যাওয়া হইল না। জীবিকা অর্জন করিতেই কুবের ব্যস্ত হইয়া রহিল। পরের দিন সকালে মালা ভয়ানক গােলমাল আরম্ভ করিয়া দিল। আই গাে কুবেরের পাষাণ প্রাণ! মেয়েটাকে সে যে কোথায় রাখিয়া আসিল, আর কি তাহার খবর লইতে হইবে না! জন্মের মতাে রাখিয়া দিয়া আসিয়াছে নাকি মেয়েকে, এমন যে নিশ্চিন্ত হইয়া আছে কুবের?
সারারাত মাছ ধরিয়া কুবের তখন বাড়ি ফিরিয়াছে। ভাত খাইয়া দুপুরবেলা আমিনবাড়ি রওনা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়া সে মালাকে শান্ত করিল, তারপর ঘুমাইতে গেল পিসির ঘরে। ঘুমাইয়া উঠিয়া স্নান করিয়া আসা অবধি সে আড়চোখে চাহিতে লাগিল কপিলার দিকে। কে জানে কপিলা আজ সঙ্গে যাইতে চাহিবে কি না! কপিলা কিছু বলে না, একবার সামনে আসে একবার অন্তর্হিত হয়।
খাইতে বসিয়া কুবের বলে, খাইয়া উঠাই আমিনবাড়ি রওনা দিমু কপিলা।
ফিরবা না আইজ?
কেডা জানে। হয়তাে হােটেলে থাকুম।
হােটেলে ক্যান? থাইকো, মুক্তারবাবুগাে বাড়ি থাইকো।
বলিয়া কপিলা হাসে। লজ্জা পাইয়া ঘাড় হেঁট করিয়া কুবের খাইয়া যায়। না, কপিলার মনের হদিস পাইবার ভরসা তাহার আর নাই। কখন কী বলিবে, কখন কী করিবে, কিছুই অনুমান করিতে পারা যায় না।
খাইয়া উঠিয়া কুবের ময়লা চাদরটি গায়ে জড়াইয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হইল। বড়াে সে গম্ভীর হইয়া গিয়াছে, যেন এমন একটা অপমান সম্প্রতি তাহার জুটিয়াছে যাহা তাহার প্রাপ্য নয়। বড়াে নির্মম কপিলা, বড়াে দুর্বোধ্য তাহার ব্যবহার।
রওনা হওয়ার সময় কুবেরকে চার আনা পয়সা দিয়া কপিলা বলিল, গােপিরে ফল কিনা দিবা মাঝি। তারপর মালাকে বলিল, মাঝির লগে যামু নাকি দিদি?
মালা বলিল, তর গিয়া কাম কী?
তখন কপিলা বিষণ্ণভাবে একটু হাসিল, কুবেরের দিকে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মাঝি কী কও?
কুবের মাথা নাড়িল, তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল। আমিনবাড়ি সে পৌছিল অপরাহ্নে, কপিলার পয়সা দিয়া স্টিমারঘাট হইতে কমলালেবু কিনিয়া গােপিকে দেখিতে গেল, নদীতীরে ফিরিয়া আসিল সন্ধ্যাবেলা। আজ বাড়ি ফিরিবার নৌকার অভাব নাই, তবু কুবেরের