পাতা:পরাধীন প্রেম - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিরাট ধৈর্য, বিপােল অধ্যবসায়, অপব সংযম, অতি সন্তপণে চারিদিক বিবেচনা করে প্রত্যেকটি পদক্ষেপ করা-এর একটার অভাব হলে তার চেষ্টা যে বিফল হবে এটােক বঝাবার মত বন্ধি বিনয়ের ছিল। দু’-ছ’টা মাস একেবারে চুপচাপ নিশ্চেষ্টভাবে কাটিয়ে দেয়। নিজের জীবনে যে বিপৰ্যায়কর কান্ডটা ঘটে গেছে তার দাপটা সামলে শাস্ত হবার জন্য তাকে সময় দেওয়া চাইতো! তারপর তার অপব জয়যাত্রা শরা হয়-তিল তিল করে সীমারেখা বাড়িয়ে বকুলের সমগ্র হদয় মন দখল করার অভিযান । বিনয় জানে, তার সঙ্গে যখন বিয়ের কথা উঠেছিল তখন তার কিশোরী চিত্তে তাকে নিয়ে ভারী একটা আন্দোলন শহর হয়েছিল । ছেলেবেলা থেকে সে তাকে ভক্তি করেছে, শ্রদ্ধা করেছে এবং খাব সম্ভব যে ক’টা দিন তার সঙ্গে বিয়ের কথাটা নিয়ে সকলে আলোচনা করেছিল, সে ক’টা দিন তাকে ভাবী বর ভেবে নিজের মনে একটু আধটু ভালবাসার খেলাও খেলেছে । কচি মন হলেও বর-বেী নিয়ে পতােল খেলে এসেছে বহদিন থেকে, ওরকম না হয়েই পারে না। তার মনের সেই আন্দোলনটুকু একেবারে উবে যায়নি, তলায় চাপা পড়ে আছে মাত্র । একদিন বিনয় তার সেই পরোনো সমিতিষ্টাকে বেশ করে নাড়া দিয়ে দেয় । তাদের বাড়ির নিচের তলায় গোলমাল একটু বেশি হয়। ওপরটা প্রায় সব সময়ই বেশ নিজান থাকে । ওপরে সবই প্রায় শোবার ঘর, সকাল থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ও মাঝের দাপারটা বাদ দিয়ে তাই কােরর ওপরে ওঠবার বেশি প্রয়োজন হয় না । নিজন বলে দোতলায় একটা ঘর দখল করে বিনয় পড়াশোনা করে । বকুল প্রায়ই আসে। খানিকক্ষণ নিচে তার মা’র সঙ্গে গলপ করে, খানিকক্ষণ উপরে তার কাছে কাটিয়ে যায় । তার কাছে সবদিন একা আসে না । তার ছোট বোন সাত বছরের মিনিকে টেনে নিয়ে আসে। মিনি চঞ্চল, দশ মিনিট দাদার ঘরে থেকেই চম্পট দেয়। আরও দাঁচার মিনিট বসে বকুলও পালায়। দেখে সে খশি হয়ে ওঠে । নিজনে তার সঙ্গে গলপ করতে বকুলের এই সঙ্কোচ দেখে মোটেই ক্ষম হয় না । সে জানে, যে মনোভাব ঐ সঙ্কোচটিকে জাগিয়ে তোলে, সে মনোভাব তার সঙ্কল্প সাধনে অনেক সহায়তা করবে। বকুল বোঝে, যত পরিচয়ই থাক, তার সঙ্গে নিজনে গল্প করাটা দশজনের চোখে লাগবে । ছেলেবেলা থেকে তার সঙ্গে মিশলেও সে পর। ছেলেবেলাকার কথা আলাদা, এখন আর সেদিন নেই। বকুল জানে, যৌবন এসে দ’জনের অতীতের সেই নিঃসঙ্কোচ মেলামেশাকে বাতিল করে দিয়ে তাদের মাঝে একটা ব্যবধান রচনা করে দিয়েছে । বকুলের ভিতরে এই মনোভাবের বিকাশ দেখে সে খাঁশি হয়। এটা শােভ লক্ষণ ! সেদিন সন্ধ্যা উতরে গেছে। অভয় হাফ-ইয়ারলি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, নিচে তার পড়ার ঘরে খাব চোঁচাচিছিল । বিনয় আলো জবালেনি। অন্ধকারে ভূতের মত বসে ভাবছিল, আজ যদি বকুল অয়সে এক পা এগোবে কি না ? S