পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছবির অঙ্গ
১৩৩

ভাব বলিতে characteristics. ভাব বলিতে Suggestion, এমন আরো কত কি আছে।

 এখানে ভাব বলিতে বুঝাইতেছে অন্তরের রূপ। আমার একটা ভাব তোমার একটা ভাব; সেইভাবে আমি আমার মত, তুমি তোমার মত। রূপের ভেদ যেমন বাহিরের ভেদ, ভাবের ভেদ তেমনি অন্তরের ভেদ।

 রূপের ভেদ সম্বন্ধে যে কথা বলা হইয়াছে ভাবের ভেদ সম্বন্ধেও সেই কথাই খাটে। অর্থাৎ কেবল যদি তাহা এক-রোখা হইয়া ভেদকেই প্রকাশ করিতে থাকে তবে তাহা বীভৎস হইয়া উঠে। তাহা লইয়া সৃষ্টি হয় না, প্রলয়ই হয়। ভাব যখন আপন সত্য ওজন মানে, অর্থাৎ আপনার চারিদিককে মানে, বিশ্বকে জানে, তখনই তাহা মধুর। রূপের ওজন যেমন তাহার প্রমাণ, ভাবের ওজন তেমনি তাহার লাবণ্য।

 কেহ যেন না মনে করেন ভাব কথাটা কেবল মানুষের সঙ্গন্ধেই খাটে। মানুষের মন অচেতন পদার্থের মধ্যেও একটা অন্তরের পদার্থ দেখে। সেই পদার্থটা সেই অচেতনের মধ্যে বস্তুতই আছে কিম্বা আমাদের মন সেটাকে সেইখানে আরোপ করে সে হইল তত্ত্বশাস্ত্রের তর্ক, আনার তাহাতে প্রয়োজন নাই। এইটুকু মানিলেই হইল স্বভাবতই মানুষের মন সকল জিনিষকেই মনের জিনিষ করিয়া লইতে চায়।

 তাই আমরা যখন একটা ছবি দেখি তখন এই প্রশ্ন কবি এই ছবির ভাবটা কি? অর্থাৎ ইহাতে ত হাতের কাজের নৈপুণ্য দেখিলাম, চোখে দেখার বৈচিত্র্য দেখিলাম, কিন্তু ইহার মধ্যে চিত্তের কোন্ রূপ দেখা যাইতেছে—ইহার ভিতর হইতে মন মনের কাছে কোন্ লিপি পাঠাইতেছে? দেখিলাম একটা গাছ—কিন্তু গাছ ত ঢের দেখিয়াছি, এ গাছের অন্তরের কথাটা কি, অথবা যে আঁকিল গাছের মধ্যদিয়া তার অন্তরের কথাটা কি সেটা যদি না পাইলাম তবে গাছ আঁকিয়া লাভ কিসের? অবশ্য উদ্ভিদতত্ত্বের বইয়ে যদি গাছের নমুনা