পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
পরিচয়

দিতে হয় তবে সে আলাদা কথা। কেননা সেখানে সেটা চিত্র নয় সেটা দৃষ্টান্ত।

 শুধু রূপ শুধু ভাব কেবল আমাদের গোচর হয় মাত্র। “আমাকে দেখ” “আমাকে জান” তাহাদের দাবি এই পর্য্যন্ত। কিন্তু “আমাকে রাখ” এ দাবি করিতে হইলে আরো কিছু চাই। মনের আম-দরবারে আপন আপন রূপ লইয়া ভাব লইয়া নানা জিনিষ হাজির হয়, মন তাহাদের কাহাকে ও বলে, “বোসো,” কাহাকেও বলে “আচ্ছা যাও।”

 যাহারা আর্টিষ্ট তাহাদের লক্ষ্য এই যে তাহাদের সৃষ্ট পদার্থ মনের দরবারে নিত্য আসন পাইবে। যে সব গুণীর সৃষ্টিতে রূপ আপনার প্রমাণে, ভার আপনার লাবণ্যে, প্রতিষ্ঠিত হইয়া আসিয়াছে তাহারাই ক্লাসিক হইয়াছে, তাহারাই নিত্য হইয়াছে।

 অতএব চিত্রকলায় ওস্তাদের ওস্তাদী, রূপে ও ভাবে তেমন নয়, যেমন প্রমাণে ও লাবণ্যে। এই সত্য-ওজনের আন্দাজটি পুঁথিগত বিদ্যায় পাইবার জো নাই। ইহাতে স্বাভাবিক প্রতিভার দরকার। দৈহিক ওজনবোধটি স্বাভাবিক হইয়া উঠিলে তবেই চলা সহজ হয়। তবেই নূতন নূতন বাধায় পথের নূতন নূতন আঁকেবাঁকে আমরা দেহের গতিটাকে অনায়াসে বাহিরের অবস্থার সঙ্গে তানে লয়ে মিলাইয়া চলিতে পারি। এই ওজনবোধ একেবারে ভিতরের জিনিষ যদি না হয় তবে রেলগাড়ির মত একই বাঁধা রাস্তায় কলের টানে চলিতে হয়, এক ইঞ্চি ডাইনে বাঁয়ে হেলিলেই সর্ব্বনাশ। তেমনি রূপ ও ভাবের সম্বন্ধে যার ওজনবোধ অন্তরের জিনিষ সে “নবনবোন্মেষশালিনী বুদ্ধির” পথে কলাসৃষ্টিকে চালাইতে পারে। যার সে বোধ নাই সে ভয়ে ভয়ে একই বাঁধা রাস্তায় ঠিক এক লাইনে চলিয়া পোটো হইয়া কারিগর হইয়া ওঠে, সে সীমার সঙ্গে সীমার নুতন সম্বন্ধ জমাইতে পারে না। এই জন্য নূতন সম্বন্ধমাত্রকে সে বাঘের মত দেখে।