পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
পরিচয়

রেখা সুর প্রভৃতি বাহ্য আকার, অন্যদিকে সৌন্দর্য্য শক্তি প্রভৃতি আন্তর আকার ধারণ করে। ইহাই মনের সৃষ্টি——যাহা দেখিলাম অবিকল তাহাই দেখানো সৃষ্টি নহে।

 তারপরে, ছবিতে যেমন বর্ণিকাভঙ্গং, কবিতায় তেমনি ব্যঞ্জনা (Suggestiveness)। এই ব্যঞ্জনার দ্বারা কথা আপনার অর্থকে পার হইয়া যায়। যাহা বলে তার চেয়ে বেশি বলে। এই ব্যঞ্জনা ব্যক্ত ও অব্যক্তর বাঝখানকার মীড়। কবির কাব্যে এই ব্যঞ্জনা বাণীর নির্দ্দিষ্ট অর্থের দ্বারা নহে, বাণীর অনির্দ্দিষ্ট ভঙ্গীর দ্বারা, অর্থাৎ বাণীর রেখার দ্বারা নহে, তাহার রঙের দ্বারা সৃষ্ট হয়।

 আসল কথা, সকল প্রকৃত আর্টেই একটা বাহিরের উপকরণ, আর, একটা চিত্তের উপকরণ থাকা চাই— অর্থাৎ একটা রূপ, আরএকটা ভাব। সেই উপকরণকে সংযমের দ্বারা বাঁধিয়া গড়িতে হয়; বাহিরের বাঁধন প্রমাণ, ভিতরের বাঁধন লাবণ্য। তার পরে সেই ভিতর বাহিরের উপকরণকে মিলাইতে হইবে কিসের জন্য? সাদৃশ্যের জন্য। কিসের সঙ্গে সাদৃশ্য? না ধ্যানরূপের সংঙ্গ কল্পরূপের সঙ্গে সাদৃশ্য। বাহিরের রূপের সঙ্গে সাদৃশ্যই যদি মুখ্য লক্ষ্য হয় তবে ভাব ও লাবণ্য কেবল যে অনাবশ্যক হয় তাহা নহে, তাহা বিরুদ্ধ হইয়া দাঁড়ায়। এই সাদৃশ্যটিকে ব্যঞ্জনার রঙে রঙাইতে পারিলে সোনায় সোহাগা— কারণ তখন তাহা সাদৃশ্যের চেয়ে বড় হইয়া ওঠে,—তখন তাহা কতটা যে বলিতেছে তাহা স্বয়ং রচয়িতাও জানে না—তখন সৃষ্টিকর্ত্তার সৃষ্টি তাহার সংকল্পকেও ছাড়াইয়া যায়।

 অতএব, দেখা যাইতেছে ছবির যে ছয় অঙ্গ, সমস্ত আর্টের অর্থাৎ আনন্দরূপেরই তাই।