পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
পরিচয়
১৪২

কোনো যোগ নেই। সে আপনার সৌন্দর্য্যের মধ্যে বন্দী, ঐশ্বর্য্য্যের মধ্যে অচল।

 কিন্তু তার যত ঐশ্বর্য্য যত সৌন্দর্য্যই থাক্ তার গতিশক্তি যদি না থাকে তাহলে চল্‌তি কান তার ভার বহন করতে রাজি হয় না একদিন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পালঙ্কের উপর অচলাকে শুইয়ে রেখে সে আপন পথে চলে যায়—তখন কালের সঙ্গে কলার বিচ্ছেদ ঘটে। তাতে কালেরও দারিদ্র্য, কলারও বৈকল্য।

 আমরা স্পষ্টই দেখ‍্তে পাচ্চি আমাদের দেশে গান জিনিষটা চল্‌চে না। ওস্তাদরা বল্‌চেন, গান জিনিষটা ত চল‍্বার জন্যে হয় নি, সে বৈঠকে বসে’ থাক‍্বে তোমরা এসে সমের কাছে খুব জোরে মাথা নেড়ে যাবে। কিন্তু মুষ্কিল এই যে, আমাদের বৈঠকখানার যুগ চলে গেছে, এখন আমরা যেখানে একটু বিশ্রাম করতে পাই সে মুসাফিরখানায়। যা কিছু স্থির হয়ে আছে তার খাতিরে আমরা স্থির হয়ে থাকতে পারব না। আমরা যে নদী বেয়ে চল্‌চি সে নদী চল্‌চে, যদি নৌকোটা না চলে তবে খুব দামী নৌকো হলেও তাকে ত্যাগ করে যেতে হবে।

 সংসারের স্থাবর অস্থাবর দুই জাতের মানুষ আছে অতএব বর্ত্তমান অবস্থাটা ভালো কি মন্দ তা নিয়ে মতভেদ থাক‍্বেই। কিন্তু মত নিয়ে করব কি? যেখানে একদিন ডাঙা ছিল সেখানে আজ যদি জল হয়েই থাকে তবে সেখানকার পক্ষে দামী চৌঘুড়ির চেয়ে কলার ভেলাটাও যে ভালো।

 পঞ্চাশ বছর আগে একদিন ছিল যখন বড় বড় গাইয়ে বাজিয়ে দূরদেশ থেকে কলকাতা সহরে আস‍্ত! ধনীদের ঘরে মজ‍্লিস বস‍্ত, ঠিক সমে মাথা নড়তে পারে এমন মাথা গুন‍্তিতে নেহাত কম ছিল না। এখন আমাদের সহরে বক্তৃতা সভার অভাব নেই, কিন্তু গানের মজলিস বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্ত তানমানলয় সমেত বৈঠকী