পাতা:পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
পরিচয়

করিয়া লইয়াই চলিয়া যায় —বনষ্পতির মত জল বাতাস মাটিতে ইহাদের অন্নপানের বাঁধা বরাদ্দ নাই; ইহারা পৃথিবীতে কেবল আতিথ্যই পাইল, আবাস পাইল না! শরৎ পৃথিবীর এই সব ছোটদের এই সব ক্ষণজীবীদের ক্ষণিক উৎসবের ঋতু। ইহারা যখন আসে তখন কোল ভরিয়া আসে, যখন চলিয়া যায় তখন শূণ্য পাথরটা শূ্ন্য আকাশের নীচে হা হা করিতে থাকে। ইহারা পৃথিবীর অবুজ মেঘ, হঠাৎ দেখিতে দেখিতে ঘনাইয়া ওঠে, তার পরে প্রচুর ধারায়, আপন বর্ষন সারিয়া দিয়া চলিয়া যায় কোথাও নিজের কোনো দাবিদাওয়ার দলিল রাখে না।

 আমরা তাই বলিতে পারি, হে শরৎ, তুমি শিশিরাশ্রু ফেলিতে ফেলিতে গত এবং আগতের ক্ষণিক মিলনশয্যা পাতিয়াছ। যে বর্ত্তমানটুকুর জন্য অতীতের চতুর্দ্দোলা দ্বারের কাছে অপেক্ষা করিয়া আছে, তুমি তারি মুখচুম্বন করিতেছ, তোমার হাসিতে চোখের জল গড়াইয়া পড়িতেছে।

 মাটির কন্যার আগমনীর মান এই ত সেদিন বাজিল। মেঘের নন্দীভৃঙ্গী শিঙা বাজাইতে বাজাইতে গৌরী শারদাকে এত কিছু দিন হইল ধরা-জননীর কোলে রাখিয়া গেছে। কিন্তু বিজয়ার গান বাজিতে আর ত দেরি নাই; শ্মশানবাসী পাগলটা এল বলিয়া— তাকে ত ফিরাইয়া দিবার জো নাই;— হাসির চন্দ্রকলা তার ললাটে লাগিয়া আছে, কিন্তু তার জটায় জটায় কান্নার কন্দাকিনী।

 শেষকালে দেখি ঐ পশ্চিমের শরৎ আর এই পূর্ব্বদেশের শরৎ একই জায়গায় আসিয়া অবসান হয়—সেই দশমী রাত্রির বিজয় গানে। পশ্চিমের কবি শরতের দিকে তাকাইয়া গাহিতেছেন, “তার উৎসবের সাজ বৃথা সাজাইল, তোমার নিঃশব্দ ইঙ্গিতে পাতার পর পাতা খসিতে খসিতে সোনার বৎসর আজ মাটিতে মিশিয়া হইল যে!”—তিনি বলিতেছেন, “ফাল্গুনের মধ্যে মিলন-পিপাসিনীর