পাতা:পরিণীতা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিণীত ta “কিন্তু কেহই তাহার কৈফিয়ৎ চাহিল না, কোন কথা প্ৰকাশ পাইয়াছে কিনা, তাহাও বুঝা গেল না, কিংবা সে-বাড়ী হইতে এ-বাড়ীতে কেহ আসা-যাওয়া পৰ্যন্ত করিল না । শেখরের ঘরের সুমুখে যে খোলা ছাদটা ছিল, তাহার উপরে দাড়াইলে ললিতাদের ছাদের সবটুকু দেখা যাইত। পাছে দেখা হয়, এই ভয়ে সে এই ছাদটায় পৰ্যন্ত দাড়াইত না। কিন্তু, যখন নির্বিঘ্নে একমাস কাটিয়া গেল, তখন সে নিশ্বাস ফেলিয়া মনে-মনে বলিল, হাজার হোক, মেয়েমানুষের লজ-সরম আছে, এসকল ব্যাপার সে প্ৰকাশ করিতেই পারে না । সে শুনিয়াছিল, ইহাদের বুক ফাটিয়া গেলেও মুখ ফুটিতে চাহে না, এ কথা সে বিশ্বাস করিল এবং সৃষ্টিকৰ্ত্তা তাহদের দেহে এই দুর্বলতা দিয়াছেন বলিয়া সে মনে-মনে তাহার বুদ্ধির প্রশংসা করিল । অথচ শান্তি পাওয়া যায় না কেন ? যখন হইতে সে বুঝিল, আর ভয় নাই, তখন হইতেই এক অভূতপূর্ব ব্যথায় সমস্ত বুক ভরিয়া উঠিতেছে কেন ? রহিয়া রহিয়া হৃদয়ের অন্তরতম স্থল পৰ্য্যন্ত এমন করিয়া নিরাশায়, বেদনায়, আশঙ্কায় কঁপিয়া উঠে কেন ? তবে ত ললিতা কোন কথাই বলিবে না।--আর একজনের হাতে সঁপিয়া দিবার সময় পৰ্য্যন্ত মৌন হইয়া থাকিবে । তাহার বিবাহ হইয়া গিয়াছে, সে স্বামীর ঘর করিতে চলিয়া গিয়াছে, মনে হইলেও অন্তরে বাহিরে তাহার এমন করিয়া আগুন জ্বলিয়া উঠে কেন ? পূর্বে সে সন্ধ্যার সময় বেড়াইতে বাহির না হইয়া সুমুখের খোলা ছাদটার উপরে পদচারণা করিত, আজিও তাহাই করিতে লাগিল, কিন্তু একটি দিনও ও-বাড়ীর কাহাকেও ছাদে দেখিতে পাইল না। শুধু একদিন আন্নাকালী কি করিতে আসিয়াছিল, কিন্তু তাহার প্রতি দৃষ্টি পড়িতেই চোখ নামাইয়া ফেলিল, এবং শেখর তাহাকে ডাকিবে কি না, স্থির করিবার পূর্বেই অদৃশ্য হইয়া গেল। শেখর মনে মনে বুঝিল,