পাতা:পল্লী-সমাজ.djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পল্লী-সমাজ
১৪৪


হয়েচ, মা, এখানে তোমাকে না জানে কে?” নিজের কন্যার উদ্দেশে বলিলেন, ““লক্ষ্মি, মেয়েমানুষ হয়ে মেয়েমানুষের নামে এ অপবাদ দিস্‌নে রে, ধর্ম্ম সইবেন না। আজ ইনি তোদের যে উপকার করেচেন, তোরা মানুষের মেয়ে হ’লে তা’ টের পেতিস্‌।” বলিয়া টানিয়া রমাকে ঘরে লইয়া গেলেন। আচার্য্য-গৃহিণীর স্বামীর উদ্দেশে এই কঠোর শ্লেষ, এবং নিরপেক্ষ সত্যবাদিতায় উপস্থিত সকলেই যেন কুণ্ঠিত হইয়া সরিয়া পড়িল।

 এই ঘটনার কার্য্য-কারণ যত বড় এবং যাই হোক, নিজের কদাকার অসংযমে রমেশের শিক্ষিত, ভদ্র অন্তঃকরণ সম্পূর্ণ দুইটা দিন এম্‌নি সঙ্কুচিত হইয়া রহিল যে, সে বাটীর বাহির হইতেই পারিল না। তথাপি এত লোকের মধ্য হইতে রমা যে স্বেচ্ছায় তাহার লজ্জার অংশ লইতে আসিয়াছিল, এই চিন্তাটা তাহার সমস্ত লজ্জার কালোমেঘের গায়ে দিগন্তলুপ্ত, অতি ঈষৎ বিদ্যুৎ-স্ফূরণের মত ক্ষণেক্ষণে যেন সৌন্দর্য্য ও মাধুর্য্যের দীপ্তরেখা আঁকিয়া দিতেছিল। তাই তাহার গ্লানির মধ্যেও পরিতৃপ্তির পীড়া ছিল। এই দুঃখ ও সুখের বেদনা লইয়া, সে যখন আরও কিছুদিন তাহার নির্জ্জন-গৃহের মধ্যে অজ্ঞাতবাসের সঙ্কল্প করিতেছিল, তখন তাহাকেই উপলক্ষ্য করিয়া বাহিরে যে আর একজনের মাথার উপর নিরবিচ্ছিন্ন লজ্জা ও অপমানের পাহাড় ভাঙিয়া পড়িতেছিল, তাহা সে স্বপ্নেও ভাবে নাই।