“রমেশ!” অকস্মাৎ এক মুহূর্ত্তে সমস্ত লোকের সচকিত দৃষ্টি এক হইয়া বিশ্বেশ্বরীর মুখের উপর গিয়া পড়িল। তিনি ভাঁড়ার হইতে বাহির হইয়া কপাটের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলেন। তাঁহার মাথার উপর আঁচল ছিল কিন্তু মুখখানি অনাবৃত। রমেশ দেখিল, জ্যাঠাইমা আপনিই কখন্ আসিয়াছেন—তাহাকে ত্যাগ করেন নাই। বাহিরের লোক দেখিল, ইনিই বিশ্বেশ্বরী, ইনিই ঘোষাল বাড়ীর গিন্নী-মা!
পল্লীগ্রামে সহরের কড়াপর্দ্দা নাই। তত্রাচ বিশ্বেশ্বরী বড়বাড়ীর বধূ বলিয়াই হৌক্, কিংবা অন্য যে-কোন কারণেই হৌক, যথেষ্ট বয়ঃপ্রাপ্তিসত্ত্বেও সাধারণতঃ কাহারো সাক্ষাতে বাহির হইতেন না। সুতরাং, সকলেই বড় বিস্মিত হইল। যাহারা শুধু শুনিয়াছিল, কিন্তু ইতিপূর্ব্বে কখনো চোখে দেখে নাই, তাহারা তাঁহার আশ্চর্য্য চোখ দুইটির পানে চাহিয়া একেবারে অবাক্ হইয়া গেল। বোধ করি, তিনি হঠাৎ ক্রোধবশেই বাহির হইয়া পড়িয়াছিলেন। সকলে মুখ তুলিবামাত্রই তিনি তৎক্ষণাৎ থামের পার্শ্বে সরিয়া গেলেন। সুস্পষ্ট, তীব্র আহ্বানে রমেশের বিহ্বলতা ঘুচিয়া গেল। সে সম্মুখে অগ্রসর হইয়া আসিল। জ্যাঠাইমা আড়াল হইতে তেম্নি সুস্পষ্ট, উচ্চকণ্ঠে বলিলেন, “গাঙুলী মশায়কে ভয় দেখাতে মানা ক’রে দে, রমেশ! আর হালদার মশায়কে আমার নাম ক’রে বল্ যে, আমি সবাইকে আদর ক’রে বাড়ীতে ডেকে এনেচি—সুকুমারীকে অপমান কর্বার তাঁর কোন প্রয়োজন ছিল