পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
পাখীর কথা

দেয়, সেই জন্য বোধ হয় প্রকৃতির বিচিত্র বিধি-বিধানে পাখী নিজেদের পরিত্যক্ত পুরীষ বাসা হইতে সযত্নে এমন করিয়া সরাইয়া ফেলে যে তাহা সমীপস্থ তৃণগুল্মের উপরেও পতিত হয় না; সুতরাং হিংস্র শত্রু যে গন্ধের সাহায্যে কোনও প্রকারে তাহার অনিষ্ট করিবে সে সম্ভাবনা বড় থাকে না। একটা বিশিষ্ট জাতিকে রক্ষা করিবার জন্য বর্ণের ও গন্ধের এমন বিস্ময়কর সামঞ্জস্য বিহঙ্গতত্ত্ববিৎ পণ্ডিতেরা অনেক দিন ধরিতে পারেন নাই। অনেকেই শুধু প্রশ্ন করিয়াই ক্ষান্ত হইয়াছেন যে রচিত নীড়ের মধ্য হইতে পক্ষিপুরীষ কোথায় এবং কেমন করিয়া অন্তর্হিত হয়? এইখানে অবশ্যই পাঠককে একটু সতর্ক হইতে হইবে;—সব পাখীই যে নিজের বাসা ময়লা হইতে দেয় না বা বৃক্ষতলে পুরীষ নিক্ষেপ করে না এমন কথা আমি বলিতেছিনা। যে যে পাখী নিজেদের বাসা পরিষ্কার রাখে তাহারা অধিকাংশই passeres ও pici[১] শ্রেণীভুক্ত। ইহা সহজে অনুমান করা যাইতে পারে যে, যে সকল পাখীর ছানা জন্মিবামাত্রই চলিয়া ফিরিয়া বেড়াইতে পারে অথবা যাহারা স্বভাবতঃ হিংস্র তাহাদের এমন করিয়া আত্মগোপন করিবার আবশ্যকতা নাই বলিয়া তাহাদের এই রকম লুকোচুরি প্রায় দেখা যায় না। দেখা না যাউক, কিন্তু হিংস্র পাখীগুলা সাধারণতঃ নিজেদের বাসা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে; তাহাদের পরিত্যক্ত পুরীষ বাসার বাহিরে ভূমিতলে নিক্ষিপ্ত হয়। এক্ষেত্রে এমন কোনও আশঙ্কা থাকে না যে পুরীষগন্ধ অনুসরণ করিয়া কোনও আততায়ী তাহাদিগকে ধ্বংসের ভয় দেখাইতে পারে। পূর্ব্বোক্ত passeres জাতীয় পক্ষী যে চঞ্চুপুট সাহায্যে ময়লা স্থানা-

  1. পক্ষিজাতির মধ্যে বেশী ভাগই passeres সংজ্ঞাভূক্ত; নানা বৈচিত্র্য ও বৈষম্য সত্ত্বেও সব passeres পাখীর পায়ের অঙ্গুলি-পরিচালক পেশীগুলির লক্ষণ একই রকমের; মূর্দ্ধণ্য অস্থির লক্ষণেও বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। কাক, ময়না, সালিক, কৃষ্ণগোকুল, টুনটুনি প্রভৃতি প্রায় হাজার রকম ভারতীয় পক্ষী এই বিভাগে আসিয়া পড়ে। pici বর্গীয় স্বতন্ত্র পক্ষিবিভাগের মধ্যে সকলের অবয়বেও একটা বিশিষ্ট লক্ষণ দৃষ্ট হয়। আমাদের পরিচিত কাটঠোক্‌রা জাতীয় পাখী pici সংজ্ঞাভুক্ত।