পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৮৩

পক্ষীর অবাধ সম্মিলন ঘটিত বর্ণসাঙ্কর্য্যের প্রসঙ্গ এস্থলে বৈজ্ঞানিকের আলোচ্য। পাখীদের বর্ণসাঙ্কর্য্য বিশেষভাবে খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় সঙ্ঘটিত হইয়া থাকে বটে;পাখীর বর্ণসাঙ্কর্য্য কিন্তু বনে জঙ্গলে যখন তাহারা স্বাধীন ভাবে বিচরণ করে, তখনও বিভিন্ন শ্রেণীর স্ত্রী-পুং পক্ষী পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া সঙ্গত হইয়া থাকে এরূপ দৃষ্টান্ত অন্ততঃ পাশ্চাত্য ভূখণ্ডে বিরল নহে। কোনও কোনও পক্ষিপালক লক্ষ্য করিয়াছেন যে স্বভাবতঃ পরস্পর বিরোধী পাখীরা কিছুতেই স্বাধীন অবস্থায় যৌনসম্মিলনের প্রশ্রয় দেয় না; কিন্তু পক্ষিগৃহ-মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় তাহারা আপনা আপনি মিলিত হইয়া নূতন বর্ণসঙ্কর উৎপন্ন করে। এই নূতন বর্ণসঙ্করের বন্ধ্যাত্ব-দোষ অনেক ক্ষেত্রে থাকে না;—যদিও তাহাদের শাবক বর্ণে ও আকারে প্রকৃতির খেয়াল বশতঃ অনেক সময়ে তাহাদের জনকজননী অথবা আরও ঊর্দ্ধতন পূর্ব্ব পুরুষ হইতে পৃথক হইয়া থাকে অথবা কখনও কখনও কোন পূর্ব্ব পুরুষের সহিত তাহার সম্পূর্ণ সাদৃশ্য পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায়ই বর্ণসঙ্কর যেখানে খুব বেশী পৃথক পৃথক শ্রেণীর জনক জননী হইতে উৎপন্ন, সেখানে তাহাকে বন্ধ্যাত্বদুষ্ট দেখা যায়। অতএব এই প্রকার বর্ণসঙ্করের ইতিহাস ইহাদের জীবন-লীলার সঙ্গে সঙ্গে পর্য্যবসিত হইয়া যায়। একই পরিবারভুক্ত বিভিন্ন শ্রেণীর মিশ্রণে যে সন্তান উৎপন্ন হয় তাহা অনেক সময়ে পক্ষিপালকের আনন্দবর্দ্ধক হইয়া থাকে। Passeres পরিবারভুক্ত কেনেরি (canary) ও ফিঞ্চ জাতীয় নানা সুকণ্ঠ বিহঙ্গের যৌনসম্মিলনে পাশ্চাত্য পক্ষিগৃহমধ্যে উৎপন্ন সমস্ত বর্ণসঙ্কর তাহাদের জনক জননী অপেক্ষা অধিকতর সুমধুরকণ্ঠ হইয়া থাকে; কিন্তু তাহাদের বন্ধ্যাত্ব দোষ জন্মে।

 পাখীর বর্ণসাঙ্কর্য্য লইয়া আমরা এক নিঃশ্বাসে এত কথা বলিয়া গেলাম, বোধ হয় তাহাতে পাঠকের বুঝিবার পক্ষে কিছু বাধা