পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১২৫

রহিয়াছে; মেঘাগমে দশার্ণগ্রামের চৈত্যগুলিতে গৃহবলিভুক্ পক্ষী নীড় রচনা করিতে থাকিবে এবং কতিপয়দিনস্থায়ী হংস উপস্থিত হইয়া দশার্ণভূমি অলঙ্কৃত করিবে;—মহাকবির অতুল তুলিকায় এই সমস্ত চিত্র প্রকৃতির রহস্য যবনিকার অন্তরাল হইতে রূপে ও রসে, গন্ধে ও শব্দে সত্য হইতে তিলমাত্র বিচ্যুত না হইয়া কাব্যমধ্যে প্রতিফলিত হইয়াছে।

 “কতিপয়দিনস্থায়িহংসাঃ”, “মানসোৎকা রাজহংসাঃ” প্রভৃতি শব্দগুলি পক্ষিজীবনের এক নিগূঢ় তথ্যকে নির্দ্দেশ করিয়া দেয়। যাযাবরতা বা migration পাখীর জীবনকাহিনীর মধ্যে একটি অত্যন্ত বিচিত্র ব্যাপাব। প্রব্রজনশীল পাখীগুলি এক অব্যক্ত নিয়মের বশবর্ত্তী হইয়া এক ঋতুতে যেমন এক দেশ হইতেপাখীর প্রবজন-রহস্য অপর দেশে গমন করিয়া থাকে, তদ্রূপ আবার নিয়মিত ঋতুতে ঘড়ির কাঁটার ন্যায় পুরাতন স্থানে প্রত্যাবর্ত্তন করে। বর্ষার প্রাক্কালে দশার্ণগ্রামসমূহে যে সকল হংস দৃষ্ট হইতেছে, তাহারা যাযাবর; শীঘ্রই তাহাদিগকে এই সকল গ্রাম পরিত্যাগ করিতে হইবে; ইহাই স্মরণ করিয়া কবি বলিতেছেন—

ত্বয্যাসন্নে পরিণতফলশ্যামজম্বূবনান্তাঃ
সম্পৎস্যন্তে কতিপয়দিনস্থায়িহংসা দশার্ণাঃ।

 যক্ষের কারাবাসভূমিতে অথবা তাহার নিকটবর্ত্তী জনপদসমূহে যে সকল রাজহংস লক্ষিত হইতেছে, বর্ষাগমে তাহারা সকলেই মানসসরোবরে যাইবার নিমিত্ত উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিয়াছে। আনন্দে বুক বাঁধিয়া তাহারা পাথেয়স্বরূপ বিসকিসলয় আহরণে তৎপর রহিয়াছে। অলকামধ্যবর্ত্তী যক্ষের স্বকীয় উদ্যানে কিন্তু হংসগণের কিছু বিপরীত ভাব দৃষ্ট হয়—

বাপী চাস্মিন্ মরকতশিলা-বদ্ধ-সোপানমার্গা
হৈমৈশ্ছন্না বিকচকমলৈঃ স্নিগ্ধবৈদূর্য্যনালৈঃ।