পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৬
পাখীর কথা

সান্নিধ্যে খোলা জায়গা ইহাদিগের বিহারভূমি। বর্ষাঋতুই ইহাদিগের গর্ভাধানকাল। বাস্তবিক ইহাদিগের দাম্পত্য প্রেম পক্ষিজগতে অতুলনীয়; পক্ষিদম্পতির মধ্যে হঠাৎ একটির মৃত্যু হইলে অপরটিকে বিরহজর্জ্জরিত হইয়া প্রায়ই প্রাণত্যাগ করিতে দেখা যায়[১]

 কালিদাস মেঘদূতে এই সারসগণের যৎসামান্য পরিচয় দিয়াছেন, তাহা নিম্নে উদ্ধৃত করিলাম—

দীর্ঘীকুর্ব্বন্ পটু মদকলং কূজিতং সারসানাং
প্রত্যূষেষু স্ফুটিতকমলামোদমৈত্রীকষায়ঃ।

* * * *

শিপ্রাবাতঃ প্রিয়তম ইব প্রার্থনাচাটুকারঃ।

 সারসদিগের কণ্ঠস্বর স্বভাবতঃ তীব্র এবং সুদূরপ্রসারী। অবন্তীজনপদস্থ বিশালা-পুরীমধ্যে প্রভাত সময়ে শিপ্রাতটে বিচরণশীল সারসগণের মদকলকূজিত যে সমীরণ কর্ত্তৃক বহুদূরে নীত হইবে, তাহাতে আর বিচিত্রতা কি? মিঃ ব্লান্‌ফোর্ড লিখিয়াছেন যে, জুলাই, আগষ্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ইহারা অণ্ডপ্রসব এবং শাবকোৎপাদন করিয়া থাকে। মেঘাগমে সারসগণের মদকলকূজিত যে গর্ভাধান-সময়োপযোগী, তাহাতে সংশয় নাই।

  1. বিশপ্ ষ্টান্‌লি তাঁহার “Familiar History of Birds” নামক পুস্তকে নিম্নলিখিত ঘটনাটি লিপিবদ্ধ করিয়াছেন:—একটি ভদ্রলোক অনেক দিন একজোড়া সারস পুষিয়াছিলেন; কালক্রমে পক্ষিণীর মৃত্যু হইল। পক্ষিপালক দেখিলেন যে, জীবিত পক্ষীটি ভগ্নহৃদয় হইয়া যেন মৃত্যুমুখে পতিত হইবার উপক্রম করিতেছে। তখন তিনি একটি বড় আয়না পক্ষিগৃহমধ্যে স্থাপিত করিলেন। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখিয়া বিরহী পক্ষী তাহার সঙ্গিনীকে ফিরাইয়া পাইল মনে করিয়া, আয়নার সম্মুখে নিজের পক্ষবিস্তার পূর্ব্বক হর্ষপ্রকাশ করিল। শীঘ্রই সে সুস্থ হইয়া উঠিল। অধিকাংশ সময় সে সেই কাঁচের সম্মুখে অতিবাহিত করিত। এমনি করিয়া সেই সারস অনেক বৎসর বাঁচিয়া ছিল। পৃঃ ৩১২।