পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঋতুসংহার

 যখন ভারতবর্ষের ‘গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা’, তখন সাধারণতঃ যে যে পাখী আমাদের নয়নগোচর হয়, এবং বর্ষার সহিত যাহাদের নিবিড় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দাঁড়াইয়া গিয়াছে বলিয়া আমাদের দেশে কবিপ্রসিদ্ধি, তাহাদের কয়েকটির যথাসম্ভব বৈজ্ঞানিক পরিচয় আমি ‘মেঘদূতের পক্ষিতত্ত্ব’ প্রবন্ধে দিবার চেষ্টা করিয়াছি। মানুষের সঙ্গে পাখীর এই যে আনন্দ-সম্পর্ক, সুখে, দুঃখে, বিরহে, মিলনে, কতকটা সজ্ঞানে কতকটা অজ্ঞানে, এই যে পরস্পরের প্রীতিবন্ধন, ইহা যে কেবল বর্ষাঋতুতেই প্রকটিত, তাহা নহে; সমস্ত বৎসর ব্যাপিয়া ইহা তাহাদের উভয়ের জীবন-নাট্যের সহিত বিচিত্র রহস্যসূত্রে গ্রথিত হইয়া আছে। ঋতুপরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাখীগুলির হাবভাব-ভঙ্গীর বিচিত্র পরিবর্ত্তন আলোচনা করিবার সুযোগ কালিদাসের ঋতুসংহার কাব্যে আমরা কতকটা পাই। বিহঙ্গ-তত্ত্ব-জিজ্ঞাসু বাঙ্গালী পাঠক-পাঠিকা যদি প্রকৃতির উন্মুক্ত লীলাকুঞ্জে মানবসম্পর্কবিরহিত স্বাধীন পাখীর গতিবিধি প্রভৃতি লক্ষ্য করিতে চান, তাহা হইলেও ঋতুসংহারের যৌবনভারনিপীড়িতা নায়িকাকে স্বচ্ছন্দে দূরে রাখিয়া কেবলমাত্র বৎসরের বিভিন্ন ঋতুতে মহাকবিবর্ণিত পাখীগুলিকে লইয়া যথেষ্ট আনন্দ ও জ্ঞান লাভ করিতে পারিবেন। রসসাহিত্যে, বিশেষতঃ ঋতুসংহারের মত কাব্যে, নায়কনায়িকা একান্ত আবশ্যক বটে; কিন্তু আমরা আমাদের উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য সেই রসসাহিত্যের কেন্দ্রস্থ মানুষ দুটিকে যতদূর সম্ভব পশ্চাতে