পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৮৩

 এখন ক্রৌঞ্চকে বিদায় দিয়া ময়ূরের কথা পাড়িব। একবার মহাকবির মেঘদূতখানি অবলম্বন করিয়া আমি বলিয়াছিলাম যে, তিনি সজল-নয়ন শুক্লাপাঙ্গ নীলকণ্ঠ ময়ূরকে উপেক্ষার চক্ষে দেখেন নাই। ঋতুসংহারে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎ বর্ণনায়ময়ূর সেই ময়ূরের ছবি বিচিত্র পরিবেষ্টনীর মধ্যে নব নব ভঙ্গিমায় ফুটিয়া উঠিয়াছে। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড সূর্য্যকিরণতপ্ত বিদহ্যমান ফণী অধোমুখে মুহুর্মুহুঃ নিশ্বাস ফেলিতে ফেলিতে প্রায় নিশ্চল হইয়া ময়ূরের তলে শয়ান রহিয়াছে;—ক্লান্তদেহ কলাপী কলাপচক্র-মধ্যে নিবেশিতানন সর্পকে হনন করিতেছে না।—যাহাদের মধ্যে খাদ্যখাদক সম্বন্ধ তাহাদের এইরূপ অবসাদ, ক্লান্তি ও শান্তির ছবি জগতের কোনও সাহিত্যে অন্য কোনও কবি এমন করিয়া দিতে পারিয়াছেন কি না জানি না। কিন্তু এই সাপ ও ময়ূরটিকে অবলম্বন করিয়া যে প্রচণ্ড গ্রীষ্মের ছবি আমাদের মনশ্চক্ষুর সমক্ষে জাগিয়া উঠিল, তেমনটি আর কিছুতে ফুটিয়া উঠিত কি না সন্দেহ। উৎকট বস্তুতন্ত্রতার দিক্ হইতে দেখিলে হয়’ত সমালোচক বলিবেন যে, কবিবর এখানে কিছু বাড়াবাড়ি করিয়াছেন। বাস্তবিক জীবতত্ত্বহিসাবে উহাদের মধ্যে খাদ্য-খাদক সম্বন্ধ রহিয়াছে একথা অস্বীকার করিবার যো নাই। পাঠকবর্গের স্মরণ থাকিতে পারে যে, এই ময়ূরটি আমাদের পুরাতন পরিচিত বন্ধু pavo Cristatus। তাহার বিহারের কথা বলিবার কিঞ্চিৎ সুযোগ পাইয়াছিলাম; কিন্তু অহারের কথা এপর্য্যন্ত বলা হয় নাই। ভারত গভর্ণমেণ্টের কৃষি বিভাগের প্রকাশিত নিবন্ধে[১] ভারতবর্ষীয় পক্ষীর আহার সম্বন্ধে অনেক তথ্য বিবৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে শিখীর (pavo cristatus) আহার্য্য-প্রসঙ্গে এইরূপ লিপিবদ্ধ আছে—

  1. “The Food of Birds in India (January 1912) by C. W. Mason and H. Maxwell Lefroy, p. 225.