পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৮৭

ornithologist ইহা অমূলক বলিবেন না। অতএব সে হিসাবে ঋতুসংহারের বসন্তবর্ণনায় যে পুংস্কোকিলের কণ্ঠধ্বনি শ্রুত হইবে, ইহা স্বাভাবিক ও বৈজ্ঞানিক সত্য। স্ত্রীকোকিলেরও ডাক শোনা যায়, কিন্তু যে পঞ্চম স্বর চিরদিন ভারতবর্ষের আবালবৃদ্ধবনিতাকে মুগ্ধ করিয়া আসিতেছে, তাহা নিশ্চয়ই ঐ পুংস্কোকিলেরই কণ্ঠধ্বনি। বসন্তাগমে কোকিলেরা ঘরকন্না পাতিয়া বসে না, অথচ এই সময়েই তাহাদের গর্ভাধান কাল। তাহাদের জীবনের পরভৃৎরহস্যের প্রসঙ্গ এস্থলে তুলিতেছি না;—পরভৃৎরহস্যের কতকটা বিস্তারিত আলোচনা পূর্ব্বে প্রসঙ্গান্তরে করিয়াছি। এই গর্ভাধান কালে কিন্তু কোকিলদম্পতির কলকণ্ঠ, বিশেষতঃ পুং-স্কোকিলের কণ্ঠস্বর বিদেশীয়দিগের মস্তিষ্কবিকৃতি জন্মায়; নহিলে তাহারা কোকিলকে Brain-fever Bird বলিবে কেন? ইহাদের স্বরের তারতম্য বিষয়ে জার্ডন লিখিতেছেন[১]

 About the breeding season the koel is very noisy * * * * the male bird has also another note * * *. When it takes flight, it has yet another somewhat melodious and rich liquid call.

 এই melodious rich liquid call না থাকিলে কি “পরভৃত”, “অন্যপুষ্ট” কোকিলকে বিতনুর বন্দী আখ্যা দেওয়া যায়? যাহার কণ্ঠস্বর মদনের বৈতালিক গীত, তাহাকে পরপুষ্ট পরভৃত বলিয়া ঘৃণা করা চলে না; তাই ঋতুসংহারের বসন্তবর্ণনায় সমস্ত ষষ্ঠ সর্গ ব্যাপিয়া সে এতখানি জায়গা জুড়িয়া বসিয়া আছে। কেমন করিয়া পরের বাসায় ডিম ফুটিয়া কোকিলের ছানা বাহির হয়, কি উপায়ে এতকাল ধরিয়া শত্রুপুরীতে তাহার জীবন রক্ষা হইয়া আসিতেছে, প্রকৃতির এই বিচিত্র লীলারহস্যের কিঞ্চিৎ বিস্তারিত আলোচনা অন্যত্র করিয়াছি। কোনও বিহঙ্গতত্ত্বজিজ্ঞাসু এই রহস্য এড়াইয়া

  1. The Birds of India, Vol. I, p. 343.