পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
পাখীর কথা

বহুধারবর্ষী মেঘ শ্রবণমধুর শব্দ করিয়া ধীরে ধীরে গমন করিতেছে। পিপাসাকুল চাতক তোয়ভারাবলম্বী মেঘের নিকট বারিবিন্দু যাচ্ঞা করিতেছে। এই চাতক ও আমাদের ‘ফটিকজল’ পাখী এক কি না, সে সম্বন্ধে মেঘদূতপ্রসঙ্গে যাহা বলিয়াছি তদতিরিক্ত আপাততঃ আমার কিছু বলিবার নাই।

 এইখানে এই প্রবন্ধের উপসংহার করিয়া আমি বলিতেছিলাম আমার কথাটি ফুরালো। কিন্তু কিংশুক পুষ্পের আড়াল হইতে বসন্তঋতুতে ছদ্মবেশে শুকপাখীকে দেখিতে পাইতেছি;—একেবারে তাহার কথা কিছুই না বলিয়া কেমন করিয়া ঋতুসংহারের পাখীর কথা শেষ করা যায়। কবি প্রশ্ন করিতেছেন—কিং কিংশুকৈঃ শুকমুখচ্ছবিভির্ন ভিন্নং, অর্থাৎ টিয়া পাখীর মুখের ছবির মত পলাশকুসুম কিশুক (নারীগতচিত্ত যুবকের মনকে) বিদীর্ণ করিতে সমর্থ হইতেছে না? এখানে সৌন্দর্য্যের কবি কালিদাসের চক্ষে পাখীর রূপের সঙ্গে ফুলের কান্তির বিচিত্র সম্মিলন হইল বটে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বজিজ্ঞাসুর সমক্ষে ornithology সঙ্গে Botany আসিয়া মিশিল। এই ফুলের ও পাখীর কথা, উদ্ভিদ্‌বিদ্যার ও বিহঙ্গতত্ত্বের অপরূপ সংঘর্ষ, ইহা যে কেবল কবির মস্তিষ্কপ্রসূত তাহা নহে। প্রকৃতির চিত্রপটে ফুল ও পাখী যে সৌন্দর্য্যের রেখা টানিয়া যায়, রূপে ও রসে, গন্ধে ও স্পর্শে যে মাধুর্য্য বিকীর্ণ করে, তাহা কবির রসসাহিত্যের অত্যাবশ্যক উপাদান বটে; কিন্তু Botanist ও ornithologist পাশাপাশি বসিয়া বৈজ্ঞানিক চসমা চোখে আঁটিয়া পাখীর ও ফুলের লীলা দেখিয়া শেষ করিতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে আমি পরাগকেশর ও গর্ভকেশর এবং চঞ্চুপুটসাহায্যে উভয়ের মধ্যে বিহঙ্গের দৌত্যের কাহিনী বিবৃত করিতে চাহি না। পক্ষিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ্‌তত্ত্ব এই উভয় তত্ত্বের দিক্ হইতে economic ornithologyর অবতাৱণা করিতেছি না; কিন্তু এ অবস্থায় ঐ টিয়া-