পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
১৯৩

দেখা দেয়, তাহাদের সম্বন্ধে সাহিত্যের বাহিরে সমাজবদ্ধ সাধারণ ভারতবাসীর অজ্ঞতা বড় কম নহে। সেই অজ্ঞতা দূরীকরণের চেষ্টা পাশ্চাত্য ভূখণ্ডে অনেক দিন হইতে দৃষ্ট হয়। আমাদের দেশের মনীষিগণের দৃষ্টি এই দিকে আকর্ষণ করিবার জন্য, আমি কালিদাসের তিনখানি নাটক হইতে কয়েকটী পাখীর বর্ণনা অবলম্বন করিয়া তাহাদিগের সম্বন্ধে একটু আলোচনায় প্রবৃত্ত হইব।

 প্রথমেই ধরিয়া লইলাম যে, ‘বিক্রমোর্ব্বশী,’ ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’ ও ‘অভিজ্ঞানশকুন্তল’ নাটকত্রয়ের রচয়িতা একই ব্যক্তি; এবং তিনি আর কেহই নহেন, স্বয়ং কালিদাস। এসম্বন্ধে এস্থলে কোনও তর্কবিতর্কের অথবা সমালোচনার আবশ্যকতা নাই। এইটুকু মানিয়া লইয়া আমরা উক্ত নাটকগুলির ভিতরে পক্ষিতত্ত্বের দিক হইতে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করিবার চেষ্টা করিব।

 প্রথমেই ‘বিক্রমোর্ব্বশী’র কথা পাড়া যাউক। অসুরগণ বলপূর্ব্বক উর্ব্বশীকে হরণ করিয়া লইয়া যাইতেছে। চিত্রলেখাসমভিব্যাহারে কুবের-ভবন হইতে প্রত্যাবর্ত্তনকালে অর্দ্ধপথে তাঁহার এই বিপদ ঘটিল। রাজা পুরুরবা দৈবক্রমে তথায় উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে আততায়ীর হস্ত হইতে উদ্ধার করিলেন। রম্ভা, মেনকা প্রভৃতি অপ্সরাকে সঙ্গে লইয়া উর্ব্বশী চঞ্চুপুটে মৃণালসূত্রাবলম্বিনী রাজহংসীর ন্যায়, রাজার দেহ হইতে মনটিকে কাড়িয়া লইয়া আকাশমার্গে অদৃশ্য হইলেন।

 উর্বশী দানবের হস্তে বন্দী হইতেছেন কি না, এ সংবাদ যখন কেহই অবগত ছিলেন না, তখন সহসা আকাশ হইতে কুররীর কণ্ঠধ্বনির ন্যায় যেন কাহার করুণ আর্ত্তনাদ শ্রুত হইতেছে, এইটুকু আমরা সূত্রধার প্রমুখাৎ জানিতে পারিলাম। সূত্রধারের সংশয় উপস্থিত হইল,—শব্দটা কি কুসুমরসমত্ত ভ্রমরগুঞ্জন? অথবা ধীর পরভৃতনাদ?