পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
পাখীর কথা

মত্তানাং কুসুমরসেন ষট্‌পদানাং
শব্দোঽয়ং পরভৃতনাদ এষ ধীরঃ।

নাটকের প্রথম অঙ্কে উর্ব্বশী-পুরুরবা-ঘটিত ব্যাপারটি লইয়া মহাকবি যে রসের অবতারণা করিলেন, পক্ষিতত্ত্বের দিক্ হইতে রসভঙ্গ করিয়া আমি যদি ঐ মৃণালসূত্রাবলম্বিনী হংসী, ঐ আর্ত্ত কুররী ও ধীর পরভৃতকে লইয়া এস্থলে তাহাদের সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বৈজ্ঞানিক আলোচনা করিতে প্রবৃত্ত হই, তাহা হইলে আমাকে অরসিক বলিয়া কৃপার চক্ষে দেখিবার পূর্ব্বে, সহৃদয় পাঠক যেন মনে রাখেন যে মহাকবিরচিত নাটকের মধ্যে বর্ণিত পাখীগুলি বৈজ্ঞানিক সত্য ও বাস্তব জীবন হইতে তিলমাত্র বিচ্যুত হয় নাই। এখন কিন্তু নাটক হইতে আরও একটু ঘন কাব্যরস পাঠককে উপহার দিতে ইচ্ছা করি।

 উর্ব্বশী চলিয়া গেলেন। রাজার বিষম চিত্তবিকার উপস্থিত হইল। পাগলের ন্যায় তিনি বনে বনে ভ্রমণ করিতেছেন। বনের ফুল, বনের ফল দেখিয়া তাঁহার মনশ্চক্ষুর সমক্ষে উর্ব্বশীর রূপলাবণ্য ফুটিয়া উঠিতেছে; কিন্তু কেহই তাঁহাকে সান্ত্বনা দিতে পারিতেছে না। উর্ব্বশী কোথায় গেল, কে বলিয়া দিবে? তাহার সঙ্গলিপ্সু রসপিপাসু পুরুরবা, নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কে “চাতকব্রত” অবলম্বন করিয়াছেন; চাতক যেমন একনিষ্ঠভাবে মেঘস্খলিত বারিবিন্দুর জন্য উন্মুখ হইয়া থাকে, রাজাও তেমনি একনিষ্ঠভাবে উর্ব্বশীর সঙ্গরূপ “দিব্যরসপিপাসু” হইয়াছেন। ক্ষণেকের জন্য রাজার পিপাসা মিটিল। রঙ্গিনী উর্ব্বশী চিত্রলেখাকে সঙ্গে লইয়া রাজার সহিত মিলিতা হইলেন। তাহার পর অপ্সরাদ্বয়ের তিরোভাব ও রাজ্ঞী ঔশীনরীর হঠাৎ আগমন। রাজা তখন বয়স্যের সহিত বিশ্রম্ভালাপ করিতেছিলেন। উর্ব্বশী অদৃশ্য থাকিয়া যে ভূর্জ্জপত্র রাজার নিকটে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, তাহা কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। তাঁহাকে অন্যমনস্ক করিবার জন্য বয়স্য নানা কথা পাড়িল,—দেখুন, মহারাজ! এই ময়ূরপুচ্ছ