পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
পাখীর কথা

লেন না; তাঁহার চঞ্চল চিত্তে সরোবরে প্রেমরসাভিষিক্ত ক্রীড়াশীল হংসযুবার চিত্র ফুটিয়া উঠিল। তিনি গাহিলেন—

এক্কক্কম-বড্ঢিঅ-গুরুঅর-পেম্মরসে।
সরে হংস জুআণও কীলই কামরসে॥

তাহার পর তিনি ভোম্‌রা, হাতী, পাহাড়, নদী যাহা কিছু সম্মুখে দেখিতে পান, তাহাকেই কাতর ভাবে নিজের বেদনা জ্ঞাপন করিতে লাগিলেন। তাঁহার মনে হইল, উর্ব্বশী নদীরূপে পরিণত হইয়াছেন;—তরঙ্গভঙ্গী প্রিয়ার ভ্রূভঙ্গী, তরঙ্গবেগে চঞ্চল বিহগশ্রেণী তাঁহার কাঞ্চীদামস্বরূপ, ফেনপুঞ্জ কোপবশে শিথিলীভূত বসনস্বরূপ। * * * * হে প্রিয়তমে, সুন্দরি, নদীরূপিণি উর্ব্বশি! তুমি আমার এই নমস্কার দ্বারা প্রসন্না হও। নদীরূপিণী তোমাতে হংসাদি পক্ষীরা চঞ্চল হইয়া করুণস্বরে কূজন করিতেছে। * * * জলনিধি সুললিত ভাবে নৃত্য করিতেছে। হংস, চক্রবাক্‌, শঙ্খ, কুঙ্কুম প্রভৃতি তাহার আভরণ। * * * কিংবা এ প্রকৃতই নদী, উর্ব্বশী নহে। নচেৎ পুরুরবাকে পরিত্যাগ করিয়া সাগরাভিমুখে অভিসারিণী হইবে কেন?

 এইরূপে কোকিল-কূজিত নন্দন-বনে গজাধিপ ঐরাবতের মত বিরহসন্তপ্ত রাজা বিচরণ করিতে লাগিলেন—

অভিনব কুসুমস্তবকিত-তরুবরস্য পরিসরে
মদকল-কোকিল-কূজিত-মধুপ-ঝঙ্কার-মনোহরে।
নন্দনবিপিনে নিজকরিণীবিরহানলেন সন্তপ্তো
বিচরতি গজাধিপতিরৈরাবতনামা॥

 কৃষ্ণসারকে দেখিয়া রাজা মৃগলোচনা, হংসগতি সুরসুন্দরীর কথা জিজ্ঞাসা করিলেন,—তাঁহাকে সে দেখিয়াছে কি?

 সহসা পাষাণের মধ্যে রক্তাশোক-স্তবকসম রাগবিশিষ্ট মণি দেখিয়া বলিলেন, “এটা কি?” নেপথ্যে দৈববাণী হইল—“বৎস!