পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২০৩

বর্ণনা হইতে কোনও আলোকরশ্মি নিপতিত হইতেছে কিনা, তাহাই আমাদের আলোচ্য;—উর্ব্বশী-পুরুরবার উপাখ্যান একটা উপলক্ষ মাত্র। পাঠকের চিত্তে এমন কোনও কৌতূহল হয় না কি, যাহা Ornithologist ব্যতীত আর কেহ পরিতৃপ্ত করিতে পারেন না? ঐ যে সুদূর ব্যোমপথে করুণ আর্ত্তনাদের মত কি যেন শোনা যাইতেছে, উহা কি কুররীর কণ্ঠধ্বনি? কতকটা ভ্রমর-গুঞ্জন বলিয়া ভ্রম হইতেছে; আবার পরক্ষণেই ধীর পরভৃতনাদ বলিয়া মনে হইতেছে। ঐ পাখীটির স্বরূপ নির্ণয় করিতে হইবে। সখী-পরিবৃতা উর্ব্বশী যখন রাজার মনটি কাড়িয়া লইয়া আকাশপথে উড়িয়া গেলেন, তখন কবিবরের মনশ্চক্ষুর সম্মুখে চঞ্চুপুটে মৃণালসূত্রাবলম্বিনী রাজহংসীর ছবিটি স্বতঃই জাগিয়া উঠিল কেন? রূপে ও শব্দে উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য কতদূর আছে, তাহা বিচার করিয়া দেখা আবশ্যক। আবার কোন্ হিসাবে বিরহক্লিষ্ট রাজাকে চাতকব্রতাবলম্বী বলা হইয়াছে? আতপতপ্ত মধ্যাহ্নে যে শিখী তরুমূলে স্নিগ্ধ আলবালে অবস্থান করিয়া থাকে, যে কারণ্ডব তপ্তবারি পরিত্যাগ করিয়া তীরনলিনীকে আশ্রয় করিয়াছে, এবং ক্রীড়াভবনে যে পঞ্জরস্থ শুক ক্লান্ত ও অবসন্ন হইয়া বারিবিন্দু যাচ্ঞা করিতেছে, তাহাদের বৈজ্ঞানিক পরিচয় লইবার সময় আসিয়াছে। আসন্ন সন্ধ্যায় রাজপ্রাসাদের গৃহবলভিতে যে পারাবতগুলি আশ্রয় লইয়াছে, বিহঙ্গতত্ত্ববিৎ তাহাদিগকে কোন্ পর্য্যায়ভুক্ত করিবেন? উন্মাদগ্রস্ত রাজাকে দেখিয়া কেমন করিয়া কম্পিতপক্ষ হংসযুবার সহিত তাঁহাকে তুলনা করা যাইতে পারে? পরভৃত-সহচর বসন্ত, নীলকণ্ঠ ময়ূর, শুকোদরশ্যাম অংশুক, প্রিয়াসহায় চক্রবাকের কথা স্বতন্ত্রভাবে বিচারসাপেক্ষ। পরভৃতকে কবি কেন ‘বিহগেষু পণ্ডিতৈষা জাতিঃ’ বলিয়া বর্ণনা করিলেন? এই পরভৃত পরপুষ্ট পাখীটি বাস্তবিকই কি ফল খাইতে এত ভালবাসে যে, একাগ্রচিত্তে জম্বুবৃক্ষফলাস্বাদনে মত্ত হইয়া রাজাকে গ্রাহ্যই করিল