পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২১৭

—এই ময়ূরটি আমার পছন্দ হয়। অতঃপর উহা গ্রহণ করিতে আগ্রহ প্রকাশ করিল।

 এখন বোধ হয়, পাঠক বুঝিতে পারিবেন, অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকে যে বিশ্বপ্রকৃতির চিত্র নায়কনায়িকার background রূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে, তাহার মধ্যে আমাদের পূর্ব্বপরিচিত অনেকগুলি পাখীর সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কেমন নিপুণভাবে প্রদর্শিত হইয়াছে। তপোবনের বৃক্ষকোটরে শুকপক্ষীর গৃহস্থালীর যে আভাস এখানে পাওয়া যায়, তাহা সর্ব্বাংশে সত্য কি না, দেখিতে হইবে। কোটরমধ্যে নীবারধান্য আনয়নের আবশ্যকতা কি এবং আহারান্তে তাহার হেয়াংশ বর্জ্জন করা শুকের অভ্যাস কি না? তাহার উদর সুকুমার পদ্মপত্রকে স্মরণ করাইয়া দেয় কি না, তাহাও বিচার্য্য। কোকিলরব অথবা পরভৃত-বিরুত, কোথাও বা কণ্ঠমধ্যে বিলীন পুংস্কোকিলস্বর, কোকিলবধূর অশিক্ষিতপটুত্ব—অন্তরীক্ষগমনের পূর্ব্বে অপর পক্ষী কর্ত্তৃক আপন সন্তান প্রতিপালনের নিপুণ ব্যবস্থা প্রভৃতি পরভৃৎরহস্যের জটিল কথাগুলি বিশেষভাবে বৈজ্ঞানিক আলোচনার বিষয়। বিক্রমোর্ব্বশী ও মালবিকাগ্নিমিত্রের রথাঙ্গ এখানে চক্রবাকবধূ অথবা চক্রবাকীরূপে দেখা দিয়াছে—“এষাপি প্রিয়েণ বিনা গময়তি রজনীং বিষাদদীর্ঘতরাম্”। চাতকের সঙ্গে মেঘের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এ নাটকেও আছে। এখানে নূতন পরিবেষ্টনের মধ্যে ময়ূরগণ “পরিত্যক্তনর্ত্তনঃ”। যে পারাবতকে আমরা মেঘদূতে গৃহবলভিতে আশ্রয় লইতে দেখিয়াছি, সেই পারাবত গৃহনীলকণ্ঠের সহিত প্রাসাদশিখরাগ্রভাগে বিরাজ করিতেছে। স্রোতোবহা মালিনী-তটে সৈকতলীন হংসমিথুনের ছবি আমাদিগকে মুগ্ধ করে; নাটকবর্ণিত হংসের নীরমিশ্রিত দুগ্ধপানভঙ্গী স্বতন্ত্রভাবে বিচার-সাপেক্ষ। এই সমস্ত ছোট বড় সুন্দর পাখী মহাকবি-রচিত তিনখানি নাটকের মধ্যেই তাহাদের রূপে, মাধুর্য্যে ও লীলাভঙ্গীতে মানবাবাস, রাজপ্রাসাদ অথবা