পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩২
পাখীর কথা

রাজার মনে শুকপক্ষীর উদরের মত শ্যামবর্ণ উর্ব্বশীর সিক্ত স্তনাংশুক বলিয়া ভ্রম হইল। সখী প্রিয়ম্বদা শকুন্তলাকে বলিতেছেন, শুকের উদরের মত সুকুমার নলিনীপত্রে তিনি নিজ নখদ্বারা চিঠি লিখিয়া ফেলুন। নাটকের মধ্যে আরও দেখিতে পাই যে, শুকপক্ষী তরুকোটরে নীড় রচনা করে; নীবার শস্যগুলি তাহার মুখ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া তরুমূলে পড়িয়া রহিয়াছে। এই শুকের (Psittacidæ শ্রেণীভুক্ত parrot) বর্ণ সম্বন্ধে স্বনামখ্যাত বিদেশীয় পক্ষিতত্ত্ববিৎ ফ্যাঙ্ক ফিন্[১] দুইটি কথায় সহজে বুঝাইতে চেষ্টা করিয়াছেন;—the prevailing colour is grass or leaf-green অর্থাৎ প্রধানতঃ বর্ণ তৃণের মত কিংবা পত্রের মত সবুজ। এখন কবির বর্ণনার সঙ্গে মিলাইয়া লইতে বোধ করি পাঠকের কষ্ট হইবে না। এই grass-green আর শ্যামল শাদ্বলে কিছু প্রভেদ নাই। আবার সুকুমার নলিনীপত্র যে leaf-green পাখীটির উদরকে স্মরণ করাইয়া দিবে, ইহা আর বিচিত্র কি? ইহার নীড় সম্বন্ধে ফ্র্যাঙ্ক ফিন্ বলিতেছেন[২] যে ইহার বাসা নাই বলিলেই হয়, সাধারণতঃ তরুকোটরই নীড়রূপে ব্যবহৃত হয়—“usually none, a hole being dug out in a tree”। নীবার শস্যগুলি পাখীর মুখ হইতে পড়িয়া গিয়া গাছতলায় ছড়াইয়া রহিয়াছে দেখিয়া পাখীটার স্বভাব সম্বন্ধে মন্তব্য প্রকাশ না করিয়া থাকা যায় না। সে কি ধান সমেত গাছ মুখে করিয়া আনিয়াছিল—তাহার নীড় রচনার জন্য? বাসা করা হইল বটে, কিন্তু ধানগুলি ছড়াইয়া পড়িল? কখনও কখনও সে nests of twigs (ফ্রাঙ্ক ফিন্) তৈয়ার করে বটে, কিন্তু সাধারণতঃ বৃক্ষকোটর তাহার নীড়াধার নয়; বৃক্ষ-কোটরই নীড়-রূপে ব্যবহৃত হয়। তবে ঐ নীবারধান্য তাহার মুখ হইতে পড়িয়া যায়

  1. The World’s Birds, p. 89.
  2. Ibid, p. 90.