পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৩৯

লক্ষণ এই প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিকের আলোচ্য, বিজ্ঞানশাস্ত্রের দিক হইতে দেখিলে সেই সমস্ত খুঁটিনাটি তুচ্ছ নহে; কিন্তু সাধারণ পাঠকবর্গের নিকটে সে সমস্ত উপস্থাপিত করা নিষ্প্রয়োজন। মোটামুটি এই কথা বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে এই তিনটি Accipitres পর্য্যায়ভুক্ত পাখী আমাদের চরক ও সুশ্রুতকারের মতে “প্রসহ” শ্রেণীর মধ্যে সন্নিবিষ্ট। এই প্রসহ শব্দের তাৎপর্য্য—প্রসহ্য ভক্ষয়ন্তীতি, অর্থাৎ যাহারা ছোঁ মারিয়া ভক্ষ্য দ্রব্য গ্রহণ করে। ইহাতে সহজে বুঝা যায় যে, এই প্রসহ জাতীয় বিহঙ্গ পাশ্চাত্য পণ্ডিতের Accipitres অথবা diurnal birds of prey। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা যেমন হিংস্র বিহঙ্গগুলিকে মোটামুটি তিনটি স্বতন্ত্র পরিবারে বিভক্ত করিয়াছেন, তদ্রূপ আমাদের দেশের সুধীগণও উহাদিগকে তিনটি স্বতন্ত্র পরিবারভুক্ত করিয়াছেন। Vulturidæ, falconidæ, এবং pandionidæ যথাক্রমে গৃধ্র, শ্যেন ও কুরর রূপে দেখা দিতেছে।

 সুশ্রুতের টীকাকার ডল্লনাচার্য্য মিশ্র গৃধ্রের এইরূপ পরিচয় দিতেছেন—গৃধ্রঃ মাংসাশী যোজনদৃষ্টিঃ। পাশ্চাত্য পণ্ডিত বলিতেছেন[১]—“They feed on dead animals, and congregate in an extraordinary manner wherever a carcass is exposed * * * * the vultures are dependent for the discovery of their food upon their eyesight.” বিক্রমোর্ব্বশী নাটকেও মহাকবি এই “বিহগতস্কর”কে “ক্রব্যভোজন” (অর্থাৎ মাংসাশী) বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। এই ক্রব্যভোজী শবভুক্ পাখীর উল্লেখ অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের ষষ্ঠ অঙ্কে রাজপুরুষের মুখে এইরূপ পাওয়া যায়; চোরসন্দেহে ধীবরকে গ্রেপ্তার করিয়া ভয় দেখান হইতেছে—“তুই গৃধ্রবলি হইবি অথবা কুকুরের মুখে যাইবি।” শুধু পাখীটার এই হেয় খাদ্যের এবং স্থলবিশেষে ইহার এই চৌর্য্য-

  1. Fauna of Br. India, Birds, Vol. III.