পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৪৯

জন্য ইহাকে Brain-fever bird আখ্যায় অভিহিত করিয়া থাকে। কোকিলের গলার সেই আওয়াজটার প্রতি মহাকরি মোটেই লক্ষ্য করিতেছেন না; প্রায়ই যখন পাখীটা আকাশমর্গে উড়িতে উড়িতে ডাকে, তাহার এই অবস্থার ডাক ঐ পূর্ব্ববর্ণিত “melodious and rich liquid call”। এখন এই ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় বোধ হয় সকল কথাই পরিষ্কার করিয়া বলা হইল; বিশেষ করিয়া আর বুঝাইবার আবশ্যকতা নাই, কেমন করিয়া আকাশমার্গে অন্তর্হিতা উর্ব্বশীর কাতরোক্তি ভীত কুররীর আর্ত্তস্বর, অথবা উড্ডীয়মান পরভৃতের ধীর নাদ বলিয়া ভ্রম হইতে পারে। কিন্তু তাই বলিয়া যে কাব্যের মধ্যে পরভৃতের উচ্চ তীব্র বণ্ঠস্বরের উল্লেখ একেবারে নাই এ কথা বলা চলে না। বিক্রমোর্ব্বশী নাটকে আমরা বাদ্যমান পরভৃত-তূর্য্যের ধ্বনি কিছুতেই ধীর পরভৃতনাদ বলিয়া ভুল করিব না। আবার পুংস্কোকিল ও স্ত্রীকোকিলের কণ্ঠস্বর যে স্বতন্ত্র, তাহা কোকিলার প্রলাপে এবং “কণ্ঠেষু স্খলিতং পুংস্কোকিলানাং রুতম্”এ সহজেই ধরা পড়ে। ইংরাজ-লেখকও বলিতেছেন—“The male bird has also another note”[১]। সাধারণতঃ লোকে মনে করে যে পক্ষিজাতির মধ্যে স্ত্রী-পক্ষী গান করে না। কিন্তু কোকিলার সম্বন্ধে এ কথা একেবারেই খাটে না। হয়ত, তাহার কণ্ঠধ্বনি বিলাপের মত শোনায়; কিন্তু তাহার মধ্যে সঙ্গীতের note আছে ইহা নিঃসংশয়ে বলা যাইতে পারে।

 তবেই দেখা গেল যে, পরভৃতনাদ তিন প্রকার হইয়া থাকে;—ধীর, অধীর বা shrill, এবং কোকিলার বিলাপ। পাশ্চাত্য-পণ্ডিতেরাও এই বিহঙ্গের কণ্ঠ-স্বরে এই রকম তিনটি প্রকারভেদ লক্ষ্য করিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছেন।

  1. Jerdon’s Birds of India, Vol. I, p. 343.