পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
পাখীর কথা

ডিম্বের মত ফুটাইয়া তোলে। আবহমান কাল হইতে এইরূপ প্রথা চলিয়া আসিতেছে; কখনও কোথাও এমন কোন বিষম বাধা বিপত্তি ঘটিল না যে প্রকৃতির বিপুল প্রাঙ্গণ হইতে এই কৃষ্ণবর্ণ পরনির্ভর পাখীটির জীবনেতিহাস একেবারে লুপ্ত হইয়া Dodo প্রভৃতির ন্যায় কেবলমাত্র নামটুকুতে পর্য্যবসিত হইয়া জীববিদ্যাগারের একটা biologic curiosity দাঁড়াইয়া যায়। কেমন করিয়া এ বাঁচিয়া গেল এবং এখনও উপায়ান্তর অবলম্বন না করিয়া বাঁচিয়া যাইতেছে, এইটাই কৌতুকময়ী প্রকৃতির বিস্ময়কর রহস্য। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বজিজ্ঞাসু কার্য্যকারণের আলোচনা করিতে গিয়া কতকগুলি প্রত্যক্ষ সত্য ব্যতীত আর কোনও গভীর তথ্যে এখন পর্য্যন্ত এমন করিয়া প্রবেশলাভ করিতে পারেন নাই যাহাতে সাধারণ মানবের নিকটে সমস্তটা পরিষ্কার হইয়া যায়। তাহাকে বাঁচিতেই হইবে এই জন্যই বোধ হয় স্ত্রী-পক্ষীর অদ্ভুত অশিক্ষিতপটুত্ব—“স্ত্রীনাম্ অশিক্ষিতপটুত্বম্”—অন্যান্য পাখীর তুলনায় এত বেশী যে বায়স প্রভৃতি যে সকল পাখী কোকিলের ডিম নিজ নিজ নীড়ে ফুটাইয়া তোলে, তাহাদের সহজ প্রখরবুদ্ধিও বিপর্য্যস্ত হইয়া যায়। কথাটা আর একটু পরিষ্কার করিয়া বলা আবশ্যক। কাক স্বভাবতঃ তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন, সুচতুর; কিন্তু পরম কৌতুকের বিষয় এই যে, যখনই সে নীড়রচনা করিয়া তন্মধ্যে ডিম্বপ্রসব করে, তখন হইতেই সে এমন নির্ব্বোধ হইয়া যায় যে, সে আর কোন কিছুরই হিসাব রাখিতে সমর্থ হয় না; দুটা একটা ডিম বাড়িল কি না এবং সেই নবীন ডিম্বগুলার বর্ণ এবং পরিমাণ বিষয়ে তারতম্য আছে কি না এ সকল সে আদৌ লক্ষ্য করে না। এই যে অন্ধভাব, সব ডিমগুলাকেই যন্ত্রচালিতের মত তা’ দেওয়ার অভ্যাস, ইহা না থাকিলে পরভৃত টিকিয়া যাইত না। তবেই দাঁড়াইল এই যে, একদিকে মহাকবি-বর্ণিত “বিহগেষু পণ্ডিতৈষা জাতি”র “অশিক্ষিতপটুত্ব,” আর একদিকে তাহার প্রসূত ডিম্বের