পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৫৭

এই সব স্থলে স্বতঃই এই প্রশ্ন আমাদের মনে উঠে যে, এত ক্ষুদ্র নীড়ে সঞ্চিত অত্যন্ত ভঙ্গপ্রবণ উপকরণগুলির মধ্যে বৃহৎকায় আগন্তুক বিহঙ্গ বসিয়া ডিম পাড়িয়া যাইবে ইহা কি সম্ভবপর? তাই বিহঙ্গতত্ত্বজ্ঞেরা অনেক পর্য্যবেক্ষণের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে, নিশ্চয়ই অন্যত্র প্রসূত ডিম্বটিকে cuculinæ তাহাদের বিশালায়ত চঞ্চুপুটে ধারণ করতঃ অতি সন্তর্পণে এই সকল নীড়ের মধ্যে রাখিবার জন্য সুকৌশলে নানা উপায় উদ্ভাবিত করে। এইরূপ অন্যান্য অনেক পাখী আছে যাহাদের সাহায্যে পরভৃতপরিবার বাঁচিয়া আসিতেছে।

 যে কোকিলাকে নাটকের মধ্যে আমরা সহকার কুসুমের কাছে ভ্রমরীর সহিত দেখিতে পাই; কোথাও বা চূত-মুকুল দেখিয়া সে উন্মত্ত হইয়া থাকে, এই আভাস পাওয়া যায়। আবার কোথাও বা সেই বিজ্ঞ পাখীটিকে জম্বুফল খাইয়া উড়িয়া যাইতে দেখা গেল; তাহার খাদ্যাদি সম্বন্ধে একটু নিবিষ্টচিত্তে অনুধাবন করিলে স্পষ্টই প্রতীতি জন্মে যে, এই পরভৃত বিহঙ্গটি তাহার অন্যান্য জ্ঞাতিবর্গের তুলনায় প্রায় সম্পূর্ণভাবে ফলভুক্। পাশ্চাত্য দর্শয়িতাও তাহাকে frugivorous, এমন কি “most frugivorous of all the cuculinæ” এই আখ্যায় বিশেষিত করিয়াছেন।

 পরিশেষে একটি বিষয়ে সামান্য ইঙ্গিতমাত্র করিয়া আমাদের বক্তব্য শেষ করিব। মালবিকাগ্নিমিত্র নাটকে বিদূষক “বিড়ালে ধরিলে কোকিলার যে অবস্থা হয়” তাহার উল্লেখ করিয়াছেন। পোষাপাখী না হইলে যে মুক্তপ্রকৃতির মধ্যে এইরূপ হওয়া সম্ভবপর নহে ইহা বলা বাহুল্যমাত্র। মহাকবি উপমার ছলে যে এই পাখীর গৃহপালিত অবস্থার প্রতি একটু কটাক্ষ করিয়াছেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।