পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় ভাগ
২৫৯

গতি ও নিনাদ পুনরায় আমাদের সুখোৎপাদন করে। দ্বন্দ্বচর, অবিযুক্ত চক্রবাক-মিথুন, পম্পাসরোবরে উৎপলকেশর লইয়া ক্রীড় করিতেছে। রামচন্দ্র যখন যমুনা নদী দেখিতে পাইলেন, তখন দেখিলেন—যমুনা চক্রবাকবতী; যেন পৃথিবীর হেমভক্তিমতী বেণী বলিয়া মনে হইতেছে। আমরা পূর্ব্বে যে গোরোচনাকুঙ্কমবর্ণ চক্রবাকের উল্লেখ পাইয়াছি, তাহার সহিত এই হেমভক্তিমতী চক্রবাকীর কিছুমাত্র অসামঞ্জস্য নাই। চক্রবাকাঙ্কিত গঙ্গার শ্রী অতিক্রম করিয়া গৌরী বিরাজ করিতেছেন। রাজহংসের মদপটুনিনাদে সুরগজের নিদ্রাভঙ্গ হইতেছে; মানস-রাজহংসী সরোবরের সমীরণোত্থিতা তরঙ্গলেখার উপর পদ্ম হইতে পদ্মান্তরে নীত হইতেছে। কাদম্বসংসর্গবতী মানসগামিনী রাজহংস-পংক্তির ন্যায় গঙ্গা-যমুনা সঙ্গম দৃষ্ট হইতেছে। সন্নতাঙ্গী গৌরীর মঞ্জীরধ্বনির অনুকরণে কণ্ঠস্বর মিলাইয়া প্রত্যুপদেশচ্ছলে রাজহংস গৌরীকে নিজের লীলাঞ্চিত গতি যেন শিখাইতেছে। দিক্‌চক্রবাল সহসা ধূমাবৃত অথবা ধূলিসমাচ্ছন্ন হইলে মেঘভ্রমে পুলকিত রাজহংস মানসসরোবরে প্রয়াণ করিবার জন্য প্রস্তুত হইল। শরৎকালে গঙ্গা হংসমালা-শোভিতা; মরালের উল্লসিত কূজন যেন দেবতার আশীর্ব্বচন বলিয়া মনে হয়; সুরাঙ্গনা-প্রতিবিম্বিতা সুরধূনীর বক্ষে হিরণ্য-হংসাবলী কেলি করিতেছে। কুমার দেখিলেন, অমরাবতীর সুরসেবিত দীর্ঘিকার জল মত্তদিগ্‌গজমদে আবিল হইয়াছে, হিরণ্যহংসব্রজ সেই জল বর্জ্জন করিয়াছে। দীর্ঘিকার পদ্মপত্রান্তরালে যে সকল বিহঙ্গ ক্রীড়া করিতেছে, অথবা তারস্বরে কূজন করিতেছে, সেই সকল “উদকললোলবিহঙ্গ,” “নীরপতত্রী,” “কমলাকরালয়-বিহঙ্গ” চিত্রমধ্যে সুবিন্যস্ত হইয়া শোভা পাইতেছে।

 শুধু চিত্রগুলি পাঠকের সম্মুখে, ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্তভাবে কাব্য হইতে সঙ্কলন করিয়া উপস্থাপিত করা আমাদের উদ্দেশ্য নহে;