পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৪৫

সম্ভাবিত হইতে পারে, এই নূতন সমস্যার সমাধান করিতে পারিলে পালক প্রকৃতির যে গোপন রহস্য উদ্ঘাটিত করিতে সমর্থ হইবেন, তাহাতে তাঁহার আনন্দ ও বিস্ময়ের অন্ত থাকিবে না। পক্ষিজাতির বিচিত্র যৌনসম্মিলন আলোচনা করিলে দেখা যায় যে, প্রকৃতির লীলকুঞ্জে পুংপক্ষী স্বশ্রেণীস্থ পক্ষিণীকেই যে বাছিয়া লয় তাহা নহে; অনেক সময়ে সে আপন জাতির অন্তর্গত, কিন্তু ভিন্ন শ্রেণীর পক্ষিণীর সহিত স্বেচ্ছায় মিলিত হইয়া থাকে। বিহগ-দম্পতির পরস্পর শ্রেণীভেদ সত্ত্বেও এই প্রকার মিলন উভয়ের আকারগত সৌসাদৃশ্য থাকিলেই যে সঙ্ঘটিত হয় এরূপ নহে; অনেক সময়ে উভয়ের অবয়ব বা আয়তনের পার্থক্যে কিছুই আসে যায় না। একদিকে যেরূপ তুল্যাবয়ব এবং সমান-আয়তন বুলবুল জাতীয় বিহঙ্গগণের বিবিধ শ্রেণীর মধ্যে এরূপ অসবর্ণ বিবাহ প্রায়ই লক্ষিত হয়, তদ্রূপ আবার গ্রাউস্ (grouse) জাতীয় ভূচর বিহঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে পক্ষিমিথুনের আকার-বৈষম্য সত্ত্বেও উভয়ের মিলন অবাধে নিষ্পন্ন হইয়া থাকে। শ্রেণীবহুল হংসজাতির (Duck family) মধ্যে এই বিধিই সচরাচর দৃষ্ট হয়।অসবর্ণ মিলন এই নিমিত্ত বোধ হয় যে, য়ুরোপীয় পক্ষিপালকগণ বর্ণসঙ্কর পক্ষীর উদ্ভাবনকল্পে তাহাদিগের কৃত্রিম গৃহমধ্যে আবদ্ধাবস্থায় পক্ষিমিথুনের একত্র সংরক্ষণ কালে উভয়ের আকার, আয়তন বা বর্ণের সামঞ্জস্যের প্রতি অল্পই দৃষ্টিপাত করেন। বাস্তবিক বনে জঙ্গলে বর্ণসঙ্কর পক্ষী অতিশয় বিরল হইলেও যে উহা সর্ব্বদা উৎপন্ন হইতেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। মিঃ ফ্রাঙ্ক ফিন্ লিখিয়াছেন—“Wild hybrids are indeed rare; but they are of much more frequent occurrence than is generally supposed.”

 এই বর্ণসঙ্কর তাহার পিতৃকুল ও মাতৃকুল হইতে কোন কোন বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র; অনেক স্থলে ইহা বন্ধ্যাত্বও প্রাপ্ত হইয়া থাকে।