পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
পাখীর কথা

অতিশয় ক্ষুদ্রাবয়ব স্বাধীন বিহঙ্গগণের মধ্যে কিন্তু বর্ণসঙ্কর আদৌ দেখা যায় না বলিলেও চলে; যদিও ইহারা য়ুরোপীয় পালকগণের কৃত্রিম গৃহমধ্যে বিজাতীয় পক্ষিণীর সহবাস করিতে বাধ্য হইয়া অনেক সময়ে একটা নূতন জাতির সৃষ্টি করে। যথাক্রমে আমরা পক্ষিজীবনের এই এই রহস্য-যবনিকা উদ্ঘাটিত করিতে প্রয়াস পাইব।

 বিহঙ্গতত্ত্ববিদ্ মনীষিগণ আপনাদিগের পর্য্যবেক্ষণের ফলে সাব্যস্ত করিয়াছেন যে, পক্ষিগণের প্রকৃতি ও জাতিগত পার্থক্য অনুসারে উহাদিগের জননকালের (Breeding time) বৈলক্ষণ্য লক্ষিত হয়; অর্থাৎ যদিও বসন্ত ঋতু কতকগুলি বিহঙ্গের নির্দ্দিষ্ট শাবকজননকাল, গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালেও কতিপয় পক্ষী নীড়নির্ম্মাণশাবকোৎপাদন ও ঋতুবিচার ও সন্তানোৎপাদনাদি ব্যাপারে প্রবৃত্ত হয়। হেমন্ত ও শীত ঋতুতে গৃধ্র প্রভৃতি কতিপয় পাখী আবার ঐরূপ কার্য্যে ব্রতী হইয়া থাকে। পালকগণের কৃত্রিম পক্ষিগৃহে এই নিয়মের ব্যতিক্রম মাঝে-মাঝে পরিলক্ষিত হয়। এমন কতক প্রকার বিহঙ্গ দেখা যায়, যাহাদের সন্তান-জননকালের কোনরূপ বাঁধাবাঁধি নাই; তাহারা ঋতুনির্ব্বেশেষে শাবকোৎপাদনাদি গার্হস্থ্য ব্যাপারের অনুষ্ঠান করিয়া থাকে। পক্ষিজাতির এই যৌনসম্মিলনকালে পুংপক্ষিগণের নৃত্যগীত, অঙ্গলাবণ্যভঙ্গিমা, তীব্র মধুর কণ্ঠস্বর প্রভৃতি গুণরাশির বিকাশ-প্রাচুর্য্য দেখিয়া সহজে অনুমান করা যায় যে, এই সকল বৈভব-বিস্তারের গূঢ় অভিপ্রায় কেবলমাত্র মনোমত সঙ্গিণীর চিত্তাকর্ষণ করা; গৃহরক্ষিত আবদ্ধ পাখীগুলির মধ্যে কিন্তু উক্ত প্রকার বৈভববিস্তার সত্ত্বেও “জোর যার মুলুক তার” এই প্রাচীন নীতি অনেক সময় বলবতী হইয়া থাকে। সম্ভবতঃ ইহার কারণ এই যে, অল্পপরিসর পক্ষিভবনে অবরুদ্ধ কোনও এক পুংপক্ষী স্বীয় বৈভব-বিস্তার সাহায্যে মনোমত পক্ষিণীর চিত্ত হরণ করিতে সমর্থ হইলেও, স্বজাতীয় অপর এক অধিক বলশালী পক্ষী প্রতিদ্বন্দ্বিরূপে উপস্থিত হইয়া উভয়ের মিলনসুখে বাধা প্রদান করে।