পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
পাখীর কথা

পার্থক্য লক্ষিত হয়, তদ্রূপ নীড় রাখিবার অনুকূল স্থান নির্ব্বাচনেও প্রত্যেক শ্রেণীর পতত্রিমিথুনের একটা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। মোটামুটি সকলেই প্রায় দেখিয়াছেন যে, কোন কোন পাখী বৃক্ষশাখায় নীড় বিলম্বিত করিয়া দেয়, এমন কি অনেক সময়ে মনে হয় যেন পাতার গায়ে পিপীলিকার বাসা জমাট হইয়া ঝুলিতেছে; কেহ বা বৃক্ষশাখার ঘন পত্রান্তরালে নীড়টি সযত্নে রক্ষিত করে; কেহ বা তরুকোটরে গৃহস্থালী করিতে ভালবাসে; আবার কেহ কেহ অসঙ্কোচে মাতা বসুন্ধরার অঙ্কে আশ্রয় লইয়া দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করিতে চেষ্টা করে। পুরাতন অট্টালিকার ভগ্ন প্রাচীরের কোন ফাঁকের মধ্যে পাখীর বাসা অনেকেই দেখিয়া থাকিবেন; কিন্তু খোলা মাঠের উপর অনুচ্চ মাটির ঢিবিতে পাখীর বালা দেখিয়াছেন কি? উজ্জ্বল দিবাকরোদ্ভাসিত তালগাছের শিরোদেশে দোদুল্যমান নীড়ের প্রতি পথিকের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় না কি? পাখীর এই অত্যন্ত বিচিত্র স্বভাবের বিরুদ্ধাচরণ না করিয়া মানুষকে তাহার বাসা-নির্ম্মাণের জন্য অনুকূল আশ্রয়ের ব্যবস্থা করিয়া দিতে হইবে। এই নিমিত্ত পক্ষি-গৃহমধ্যে শাখাপ্রশাখাসমন্বিত বিটপীর, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝোপের, স্থানে স্থানে অনুচ্চ মাটির ঢিবির এবং প্রাচীর-গাত্রে নাতিগভীর গর্ত্তসমূহের আবশ্যকতা সহজেই উপলব্ধি করা যাইবে। অনেক সময়ে দেখা গিয়াছে যে, যদি নানা রকমের কৃত্রিম নীড়াধার গৃহের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সন্নিবেশিত করিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে অনেক পক্ষী উহাদিগকে আশ্রয় করিয়া আপন আপন বাসা তৈয়ার করিয়া থাকে। এই প্রকার যে সমস্ত নীড়াধার সচরাচর ব্যবহার করিয়া সহজেই সুফল পাওয়া যায়, তাহাদিগের কয়েকটি চিত্র প্রদর্শিত হইল।

 ১নং চিত্রে পাঠক দেখিতে পাইবেন যে, শুষ্ক ঝুনো নারিকেলে কেমন সুন্দর নীড়াধার প্রস্তুত করা হইয়াছে। নারিকেলটিকে প্রথমতঃ চিরিয়া দুইভাগে বিভক্ত করিতে হইবে; তৎপরে অভ্যন্তরস্থ কঠিন মালা বাহির করিয়া ফেলিয়া পুনরায় নারিকেল-ছোবড়ার দুটি অংশ লৌহের সূক্ষ্ম