পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ভাগ
৫৫

পক্ষিশাবক নীড় নির্ম্মাণ করিবার ক্ষমতা লইয়াই জন্মগ্রহণ করে; সময় আসিলে তাহারা তাহাদিগের সেই পুরুষ-পরম্পরাগত ক্ষমতার পরিচয় দিয়া থাকে। পক্ষিতত্ত্ববিদ্ চার্লস ডিক্সন্ (Charles Dixon) বলেন—একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে এই মত সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, যদিও প্রায় সমস্ত পক্ষিপালক এই মত পোষণ করেন। আল্‌ফ্রেড রসেল্ ওয়ালেস্ (Alfred Russel Wallace) প্রমুখ একদল প্রাণিতত্ত্ববিদ্ প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন যে, Reason কে স্বীকার করিয়া লইলে, পাখীর বাসা তৈয়ার করা ব্যাপারটা সন্তোষজনকরূপে ব্যাখ্যাত হইতে পারে। ইঁহাদিগের আলোচনার ধারা এইরূপ:—

 (ক) পাখীর Instinct অর্থাৎ সহজসংস্কার পুরুষপরম্পরাগত অভ্যাস মাত্র।

 (খ) এই Instinct কখনই পক্ষিশাবকের প্রথম কুলায়-রচনা-ক্রিয়ার একমাত্র কার্য্যকরী শক্তি বলিয়া মানিয়া লওয়া যায় না।[১]

  1. তরুণবয়স্ক পক্ষিমিথুনের সর্ব্বপ্রথম নীড়রচনার চেষ্টা যে অনেক সময়ে খড়কুটার কদাকার স্তূপে পরিণত হয়, তাহার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে; এমন কি দুইবার, তিনবার চেষ্টা করিয়াও নীড়গুলি উহাদের মনোমত হয় নাই বলিয়া অসম্পূর্ণ অবস্থায় উহাদিগকে পরিত্যাগ করিয়া পক্ষিমিথুনকে অপর স্থানে নূতন উদ্যমে নীড়রচনায় ব্রতী হইতে দেখা যায়। অনভিজ্ঞতাই যে এক্ষেত্রে নিষ্ফলতার হেতু, তাহা নিম্নলিখিত দৃষ্টান্ত হইতে জানা যায়;—অতি শৈশবে এক জোড়া chaffinch পক্ষীকে New Zealandএ লইয়া গিয়া মুক্ত করিয়া দেওয়া হইয়াছিল; তথায় এই জাতীয় পাখী আদৌ ছিল না। ইংলণ্ডই ইহাদিগের একমাত্র বাসস্থান। জ্ঞাতিবিহীন এই নূতন দেশে নূতন পরিবেষ্টনীর মধ্যে পক্ষীমিথুনকে জীবনযাত্রা নির্ব্বাহ করিতে হইয়াছিল। ইংলণ্ডবাসী জ্ঞাতিবর্গের অনুকরণে নীড় রচনা করিবার অভিজ্ঞতা ইহাদের তখন জন্মায় নাই। কাজে-কাজেই ইহাদিগের নীড়-রচনার সময় আগত হইলে New Zealand দেশীয় একপ্রকার পক্ষীর অনুকরণে বাসা করিয়াছিল মাত্র।—Vide Seebohm’s British Birds, Vol. II., p. 102.

    সহজ-সংস্কার অথবা Instinct এক্ষেত্রে কিন্তু উহাদিগের স্বজাতিবর্গের অনুরূপ নীড়নির্ম্মাণে সাহায্য প্রদান করিল না; New Zealand দেশীয় পক্ষীর বাসার অনুকরণ করিয়া তাহারা যতটুকু অভিজ্ঞতা লাভ করিতে পারিয়াছিল, তাহাতেই তাহাদের নীড়রচনার কার্য্য