পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৷৷৴৹

আমন ধান, সমুদ্রের ধারে তালবন, কলিঙ্গে পানের গাছ, নারিকেলের রস (তাড়ি), আরও দক্ষিণে চন্দন গাছ, আরও দক্ষিণে পুন্নাগ, পশ্চিমে কেতকীরজঃ, পঞ্জাবে আঙুর ক্ষেত—যেখানে যেটী সুন্দর ঠিক্ সেইটী সেইখানে লিখিয়া গিয়াছেন। হিমালয় থাকে থাকে উঠিয়াছে। যে থাকে যে জিনিস, কালিদাস সেই থাকে সেই জিনিস লিখিয়াছেন। নীচে সিংহ, বাঘ ও হাতী, একটু উপরে সরল গাছ, আর একটু উপরে দেবদারু, আর একটু উপরে জমাট বরফ—আরও কত কি, কত লিখিব। কালিদাস যখন পাখীর কথা কহেন, তখন মনে হয় এই পাখীগুলা কি? যদি জানিবার উপায় থাকিত কালিদাসের দৃষ্টিশক্তি কত ধারাল আরও বুঝিতে পারিতাম; কিন্তু মনে করিতাম তাহা কে বুঝাইয়া দিবে? কারণ্ডব কাহাকে বলে? ক্রৌঞ্চ কাহাকে বলে? সারস কি? হংস কত রকম হয়?—কেই বা জানে, কেই বা বুঝাইয়া দিবে? কিন্তু এগুলি না বুঝিলে ’ত কালিদাসকে আমরা বুঝিতে পারিব না, তাঁহার দৃষ্টিশক্তির দৌড় দেখিতে পাইব না। নানা দেশ ঘুরিয়াছি, নানা দেশ দেখিয়াছি, নানা লোককে জিজ্ঞাসা করিয়াছি—কোন্ পাখীটা ক্রৌঞ্চ ও কোন্‌টা কারণ্ডব, কেহই নিঃসন্দেহে বলিয়া দিতে পারে নাই।

 তাই সত্যবাবুর তৃতীয় ভাগ পড়িয়া আনন্দে বিভোর হইয়াছি। সত্যবাবু কালিদাসের সব পাখীগুলিকে চিনাইয়া দিবার জন্য অকাতরে পরিশ্রম করিয়াছেন, মনপ্রাণ দিয়া চেষ্টা করিয়াছেন। কালিদাসের অনেক অবোঝা সৌন্দর্য্য বুঝাইয়া দিয়াছেন। সত্যবাবু পাখীর মর্ম্ম বুঝেন, কালিদাসের পাখীগুলির মর্ম্ম বুঝাইবার চেষ্টা করিয়া কালিদাসের সমজদার লোকদের বিশেষ উপকার করিয়াছেন, তাঁহাদের গুরুতর ঋণে আবদ্ধ করিয়াছেন। তাঁহার জয় হউক।

 সত্যবাবু যে এই কার্য্য করিয়াছেন, তাহা তাঁহার বংশের অনুরূপই হইয়াছে। কলিকাতার লাহা মহাশয়েরা ধনে মানে খুব বড়।