পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
পাখীর কথা

কিছুতেই তাহাকে বিচলিত করিতে পারিতেছে না। পুংপক্ষী সাধ্যমত অহাকে চঞ্চুপুটের সাহায্যে আহার যোগাইতেছে; সর্ব্বদাই গান গাহিয়া তাহার মনোরঞ্জন করিতে প্রয়াসী রহিয়াছে। উভয়ের এই যে সাধনা, ইহাতে বিশ্বপ্রকৃতির উদ্দেশ্য সাধিত হইয়া থাকে বটে; ইহার পশ্চাতে যে নিগুঢ় শক্তি যবনিকার অন্তরালে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া বিহগযুগলের দাম্পত্যলীলায় এইভাবে ক্রিয়া করিতে থাকে, তাহাকে Instinct বলিতে হয় বলুন;—হয় ত Instinct বলিয়া তাহার পরিচয় দিবার যথেষ্ট কারণ এক্ষেত্রে বিদ্যমান রহিয়াছে। বোধ হয় এই Instinct-তত্ত্ব কতকটা মানিয়া লইলে পক্ষিজীবনের এই ডিম্ব-ঘটিত আর একটি কূট সমস্যার সমাধানের কিছুবিচারশক্তি ও পরভৃৎ-রহস্য সুবিধা হইতে পারে;—সেই parasitism বা পরভৃৎ-রহস্যের কথা এইখানে স্বতঃই আসিয়া পড়িতেছে। পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে যে আমি পাখীর এই তথাকথিত Instinct সম্বন্ধে পূর্ব্বে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিয়াছি। নূতন করিয়া সে বিষয়ে এখন বিশেষ কিছু বলিবার পূর্ব্বে নূতন পরিবেষ্টনীর মধ্যে পক্ষিজীবনের এই অভিনব রহস্য সম্বন্ধে সাধারণতঃ যে সকল ঘটনা অবলম্বন করিয়া পক্ষিতত্ত্ববিদ্‌গণ কার্য্যকারণ-নির্ণয়ে প্রায় একমত হইয়াছেন, সেইগুলির কিঞ্চিৎ আলোচনা আবশ্যক।

 আলোচনার বিষয় এই যে, ডিম্ব প্রসবের পর পক্ষিণী বিচারশক্তিহীন কলের পুতুলের মত, ইচ্ছাশক্তিবিরহিত automatonএর মত কাজ করে কি না? এ সম্বন্ধে পক্ষিতত্ত্ববিদ্‌গণের মধ্যে যথেষ্ট মতজেদ আছে। তাঁহারা সকলেই হয় ত পাখীর instinct গোড়া

    করিয়া পলায়নের চেষ্টা করে না। এতদ্ব্যতীত তাহার আসল ডিম্বটি সরাইয়া লইবার জন্য তাহাকে উঠাইয়া একটা নকল ডিম্ব তথায় স্থাপিত করিয়া পাখীটাকে ছাড়িয়া দিয়া দেখিয়াছি যে, সে সেই জাল ডিম্বটিকে সবলে আঁকড়াইয়া ধরিয়া তদুপরি উপবেশন পূর্ব্বক তাহাতে তা দিতে থাকে।