পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
পাখীর কথা

জাল-ডিম্বের উপর হয় ত বসিতে রাজি হয় না, নয় ত ডিম ফুটাইয়া বিজাতীয় পক্ষিশাবককে সংহার করিয়া ফেলে। এই সমস্ত রহস্যময় ঘটনার সমাবেশ দেখিয়া ঠিক করিয়া বলা কঠিন যে, পাখীর সহজবুদ্ধির দৌড় কতদূর; আর কোথায় এবং কখন তাহার বিচারশক্তি জাগ্রতভাবে ক্রিয়া করিতে আরম্ভ করিল, ইহাও নির্ণয় করা সহজ নয়।

 কোন্ দূর অতীতে কোন্ এক অখ্যাত দিবসে বিহঙ্গজীবনে এই পরভৃৎ-রহস্যের প্রথম সূচনা হইয়াছিল, প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে সেই বিচিত্র রহস্য-যবনিকা আজও পর্য্যন্ত উত্তোলিত হয় নাই। একটা পাখীকে বাঁচাইবার জন্য লীলাময়ী প্রকৃতি কেন যে এই খেলা খেলিলেন, এবং কবে ইহার আরম্ভ, ইহার তত্ত্ব এখনও—‘নিহিতং গুহায়াম্’। নিশ্চয়ই বহু যুগ ধরিয়া বংশপরম্পরায় কোকিল এইরূপে আপনাকে বাঁচাইয়া আসিতেছে; এই অভ্যাসটা যে ইহাদের মজ্জাগত, ইহা স্বীকার করিয়া লইলেও, ঠিক করিয়া বলা কঠিন, কি অবস্থায় এই অভ্যাসের সূত্রপাত হইল। অনেক সময়ে দেখা গিয়াছে যে, এক জোড়া পাখী তরুকোটরে অথবা বৃক্ষ-শাখার পত্রান্তরালে যথারীতি নীড় নির্ম্মাণ করিয়া তন্মধ্যে সন্তর্পণে নিজেদের সদ্যপ্রসূত ডিমগুলি রক্ষা করিতেছে; এমন সময়ে আর এক জোড়া অপর জাতীয় অধিক বলশালী পাখী আপনাদিগের নীড়োপযোগী স্থানের অন্বেষণে তথায় উপস্থিত হইয়া নীড়স্থ বিহঙ্গযুগলকে তাড়াইয়া দিয়া সডিম্ব সেই নীড়টি অধিকার করিয়া বসে। আমার পক্ষিগৃহ মধ্যে পক্ষিজীবনের এই বিচিত্রলীলা অনেকবার দেখিয়াছি। এক জোড়া (Ribbon Finch) একটা নারিকেল মালার মধ্যে বাসা তৈয়ার করিয়া ঘরকন্না করিতে লাগিল, যথা সময়ে স্ত্রী-পক্ষীটি ডিম্ব প্রসবও করিল। এমন সময়ে সেই পক্ষিগৃহের অভ্যন্তরস্থ একত্র সংরক্ষিত নানা পক্ষীর মধ্যে এক জোড়া সাদা রামগোরা (Java sparrow)