কয়েক পদ গমন করিয়া শকুন্তলার গতিভঙ্গ হইল। শকুন্তলা, আমার অঞ্চল ধরিয়া কে টানে, এই বলিয়া, মুখ ফিরাইলেন। কণ্ব কহিলেন বৎসে! যাহার মাতৃবিয়োগ হইলে তুমি জননীর ন্যায় প্রতিপালন করিয়াছিলে, যাহার আহারের নিমিত্ত তুমি সর্ব্বদা শ্যামাক আহরণ করিতে, যাহার মুখ কুশের অগ্রভাগ দ্বারা ক্ষত হইলে তুমি ইঙ্গুদীতৈল দিয়া ব্রণ শোষণ করিয়া দিতে, সেই মাতৃহীন হরিণশিশু তোমার গমন রোধ করিতেছে। শকুন্তলা তাহার গাত্রে হস্ত প্রদান করিয়া কহিলেন বাছা! আর আমার সঙ্গে এস কেন? ফিরিয়া যাও, আমি তোমাকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতেছি। তুমি মাতৃহীন হইলে আমি তোমাকে প্রতিপালন করিয়াছিলাম! এখন আমি চলিলাম; অতঃপর পিতা তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করিবেন। এই বলিয়া রোদন করিতে করিতে চলিলেন। তখন কণ্ব কহিলেন বৎসে! শান্ত হও, অশ্রুবেগ সংবরণ কর, পথ দেখিয়া চল, উচ্চ নীচ না দেখিয়া পদক্ষেপ করাতে বারংবার আঘাত লাগিতেছে।
এইরূপ নানা কারণে গমনের বিলম্ব দেখিয়া, শার্ঙ্গরব কণ্বকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন ভগবন্! অপনকার আর অধিক দূর সঙ্গে আসিবার প্রয়োজন নাই; এই স্থলেই, যাহা বলিতে হয় বলিয়া দিয়া প্রতিগমন করুন। কণ্ব কহিলেন তবে আইস এই ক্ষীরবৃক্ষের ছায়ায় দণ্ডায়মান হই। অনন্তর সকলে সন্নিহিত ক্ষীরপাদপচ্ছায়ায় অবস্থিত হইলে, কণ্ব কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া শার্ঙ্গরবকে কহিলেন বৎস! তুমি, শকুন্তলাকে রাজার সম্মুখে রাখিয়া, তাঁহাকে আমার এই আবেদন জানাইবে “আমরা বনবাসী, তপস্যায় কাল যাপন করি; তুমি অতি প্রধান বংশে জন্ম গ্রহণ করিয়াছ; আর শকুন্তলা বন্ধুবর্গের অগোচরে স্বেচ্ছাক্রমে তোমাতে অনুরাগিণী হইয়াছে। এই সমস্ত বিবে-